ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও নতুন তথ্য কমিশন গঠন করা হয়নি। এর ফলে জনগণের তথ্য জানার মৌলিক অধিকার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কমিশন গঠন না করা সরকারের এ উদাসীনতাকে ‘একটি বড় ব্যর্থতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং অবিলম্বে স্বাধীন ও কার্যকর তথ্যকমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস উপলক্ষে গতকাল এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তথ্যকমিশন পুনর্গঠন এবং তথ্যঅধিকার আইনের সংস্কার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকার নীরব থেকেছে। জনগণের তথ্য জানার অধিকার রক্ষার প্রতি সরকারের দৃশ্যমান উদাসীনতা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তথ্যকমিশন গঠনে দেরি করা সরকারের অন্যতম ব্যর্থতা।
টিআইবির এ নির্বাহী পরিচালক অভিযোগ করেন, তথ্যকমিশন না থাকায় আবেদনকারীরা তথ্য না পাওয়ার অভিযোগ করলে তার কোনো শুনানি হচ্ছে না, ফলে সমাধানও মিলছে না। তথ্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, তথ্য অধিকারবিষয়ক প্রচারণা ও অন্যান্য কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে সরকারি দপ্তরে তথ্য গোপন করার প্রবণতা এবং স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশ না করার সংস্কৃতি আরও দৃঢ় হচ্ছে।
টিআইবির মতে, তথ্যঅধিকার আইন-২০০৯ পাস হলেও কার্যকর বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ, একদিকে সরকারের সদিচ্ছার অভাব এবং অন্যদিকে কমিশনারদের মধ্যে অনেকেই রাজনৈতিক আদর্শে প্রভাবিত ছিলেন। এর ফলে কমিশন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি।
তথ্যঅধিকারকে কার্যকর করতে টিআইবি ১৫ দফা সুপারিশ করছে জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তথ্যঅধিকার আইন ও তথ্যকমিশন শুধু কাগজে-কলমে থাকলে হবে না। জনগণের হাতে তথ্য পৌঁছাতে হলে কার্যকর স্বাধীন তথ্যকমিশন অপরিহার্য।
টিআইবি মনে করে, কমিশনকে ঢেলে সাজিয়ে একটি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা না করলে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত হবে না এবং রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার পথও সংকীর্ণ হয়ে পড়বে।
তথ্যঅধিকারকে কার্যকর করতে টিআইবি ১৫ দফা সুপারিশমালা দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তথ্যঅধিকার আইন যুগোপযোগীভাবে সংশোধন ও পরিমার্জন করা, রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনা, রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা এবং নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা। এ ছাড়া বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতের অধিকার সুরক্ষায় আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা, জনগণের ওপর নজরদারিমূলক আইন ও কাঠামো বিলুপ্ত করা এবং তথ্য প্রকাশ ও প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল টুলস সহজলভ্য করা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।