হাজ্জাহ ফাতেমা বিনতে সুলাইমান (রহ.) ছিলেন একজন বিশিষ্ট নারী ব্যবসায়ী ও মসজিদ প্রতিষ্ঠাতা। পবিত্র হজব্রত পালন করায় তাকে হাজ্জাহ বলা হতো। তিনি ১৭৫৪ সালে মালয়েশিয়ার মালাক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক ঐতিহ্য অনুসারে তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ধনী ব্যবসায়ী ও বুগি রাজপুত্র দাইং চান্দা পুলিহের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সিঙ্গাপুরে পুলিহের একটি বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। তিনি ফাতেমাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে আসেন। অল্প বয়সেই হাজ্জাহ ফাতেমা স্বামীহারা হন।
স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি শক্তহাতে ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। তিনি নিজের নৌকাগুলোকে এখানে নিযুক্ত করেন। তিনি একটি স্টিমবোট তৈরি করেন এবং পালতোলা নৌকার মাধ্যমে আশপাশের অঞ্চলগুলোতে ব্যবসার প্রসার করেন।
দাইং চান্দা পুলিহের ঔরসে হাজ্জাহ ফাতেমা (রহ.) একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। তার নাম ছিল রাজা সিতি কারাইং চান্দা পুলিহ। কন্যা সন্তান হওয়ার পরও রাজা উপাধি পাওয়া ছিল বুগি রাজপরিবারের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। রাজা সিতির বিয়ে হয় সাইয়েদ আহমদ বিন আবদুর রহমান আস সাফাকের সঙ্গে। হাজ্জাহ ফাতেমা (রহ.)-এর মতো তার মেয়ের পরিবারও দানশীলতার জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করে।
সম্পদ ও ঐশ্বর্যের কারণে হাজ্জাহ ফাতেমা (রহ.)-কে গোয়ার সুলতানা বলা হতো। ফলে ক্যাম্পং গ্লামে (সিঙ্গাপুরের আরব রোডে অবস্থিত একটি স্থান) অবস্থিত তার বাড়িকে চোরেরা লক্ষ্যে পরিণত করে। তারা দুবার তার বাড়ি লুট করে। দ্বিতীয়বার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
আল্লাহ তার প্রাণ রক্ষা করায় তিনি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ নিজের বাড়ির জায়গায় মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে তিনি নিজের নামে হাজ্জাহ ফাতেমা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৪৬ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৯৭৩ সালের ২৮ জুন সিঙ্গাপুর সরকার হাজ্জাহ ফাতেমা মসজিদকে জাতীয় স্থাপনা ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে।
হাজ্জাহ ফাতেমা (রহ.) নিজের জন্য নতুন বাড়ি তৈরি করেন এবং নিজের বাড়ির পাশে দরিদ্র ব্যক্তিদের ঘর তৈরি করতে অর্থায়ন করেন। মসজিদ ও দরিদ্রদের জন্য নির্ধারিত স্থান তিনি শরিয়া আইনানুসারে ওয়াকফ করে দেন।
হাজ্জাহ ফাতেমার মৃত্যু তারিখ সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয়, তিনি ৯৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। স্বামী, জামাতা ও পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে তাকে হাজ্জাহ ফাতেমা মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। ২০১৪ সালে তার নাম সিঙ্গাপুরের নারীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হল অব ফেইমে যুক্ত করা হয়। মসজিদ প্রতিষ্ঠা, দানশলীতা ও মানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য তার নাম যুক্ত করা হয়।
তার মৃত্যুর পর তার জামাতা ব্যবসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে তা আল সাগফ পরিবারের কাছে চলে যায়। আল সাগফ পরিবার হাজ্জাহ ফাতেমা মসজিদের মুতাওয়াল্লিও ছিল। মেয়ের বিয়ে হওয়ার পর হাজ্জাহ ফাতেমা (রহ.) নিজেও আল সাগফ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। এই পরিবারের অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ে ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন। তার নাতি সাইয়ে মুহাম্মদ আহমদ আল সাগফ, তিনি নং চিক নামেও পরিচিত, তিনি দ্য মুসলিমিন ট্রাস্ট ফান্ড অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করন। সংস্থাটি মসজিদের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিল পরিচালনা করে।
তথ্যসূত্র : হাজ্জাহ ফাতেমা মসজিদ ডটএসজি, মুসলিম ডটএসজি ও এনএলবি ডটগভ ডটএসজি
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ