দীর্ঘ ছয় বছরের বেশি সময় পর গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই এ নির্বাচন নিয়ে উঠতে থাকে বিভিন্ন অভিযোগ। এর মধ্যে একটি গুরুতর অভিযোগ ছিল অরক্ষিতভাবে নীলক্ষেতে ব্যালট পেপার ছাপানোর। অভিযোগের সূত্র ধরে এ বিষয়ে জানতে নীলক্ষেত গাউসুল আজম মার্কেটে অনুসন্ধান করেছে নিউজটোয়েন্টিফোর টেলিভিশন-এর অনুসন্ধানী টিম। তারা নীলক্ষেতে অরক্ষিতভাবে ব্যালট পেপার ছাপানোর সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, নীলক্ষেতে নয় বরং সর্বোচ্চ গোপনীয়তায় উন্নতমানের ছাপাখানায় তৈরি হয়েছে ব্যালট। এদিকে ব্যালট ছাপানোর সংখ্যা নিয়েও ছাপাখানা আর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্যে গড়মিল উঠে আসে অনুসন্ধানে। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে এক সাক্ষাতের পর এক সংবাদ সম্মেলনে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ‘অসঙ্গতি’ ও তা নিয়ে প্রশাসনের গড়িমসির অভিযোগ তোলেন পরাজিত ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদের ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নীলক্ষেতে গাউসুল আজম মার্কেটে এ ব্যালট ছাপানোর সুযোগ নেই। তবে নিউজটুয়েন্টিফোর টেলিভিশনের অনুসন্ধান টিমের প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নীলক্ষেতের জালাল প্রেসে দেখা গেছে, প্রেসটি ব্যালট পেপার ছাপতে পারে। প্রেসটির মালিক মো. জালালের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ডাকসু নির্বাচনে যে ব্যালটে ভোট হয়েছে সেটি তার প্রেস থেকে ছাপা কি না। উত্তরে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ।’ অনুসন্ধানে কার মাধ্যমে ব্যালট ছাপার কাজ পেয়েছেন সেটিও পাওয়া গেছে। নথিপত্র দেখার পর মো. জালাল তার নামও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে কাজ দিয়েছে তার নাম মো. ফেরদৌস। মোটামুটি তিন দিনেই আমরা কাজটা করেছি। ৭ তারিখ (৭ সেপ্টেম্বর) ব্যালট ডেলিভারির লাস্ট ডেট ছিল।’ তিনি জানান, তার প্রেসের খোলামেলা পরিবেশেই ডাকসুর ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে। বন্ধ ছিল না প্রেসের সার্টারও। তার কাছ থেকে ৪৮ হাজার পিস ব্যালট নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মো. জালাল। প্রতি কাগজে দুটি ব্যালট থাকায় এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৬ হাজার। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় ব্যালট পেপার নিয়ে কাটিং হয়েছে আরেকটি দোকানে। যার নাম ‘মক্কা পেপার কাটিং হাউস’। দোকানটির মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেরদৌস ভাই নামেই একজন কাজ নিয়ে এসেছিলেন এ দোকানে। কাটিংয়ের সময়ও পরিবেশ ছিল অরক্ষিত। নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘এটা হাইলি স্পেশালাইজ একটা প্রসেস। আমরা যখন এটা টেন্ডার করেছি, তখন একমাত্র একটি ব্র্যান্ড আবেদন করে। অন্য কারও কাছে এ মেশিন ছিল না।’ নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানোর তথ্যপ্রমাণ আছে জানালে তিনি বলেন, ‘যেহেতু বলছে প্রমাণ আছে তাহলে আমাদের প্রশাসন খতিয়ে দেখবে।’