গাজীপুর, মেহেরপুর ও গাইবান্ধায় গতকাল পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। গাজীপুরে কাভার্ড ভ্যান-সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন, মেহেরপুর ও গাইবান্ধায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়।
গাজীপুর প্রতিনিধি : কালিয়াকৈরের ফুলবাড়িয়া বড়চালা এলাকায় কাভার্ড ভ্যান-সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজনসহ সিএনজি আরোহী পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কের এ দুর্ঘটনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তারা হলেন- বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার ঈশ্বরঘাট গ্রামের ছাবেদ আলী প্রামাণিকের ছেলে মো. জাহিদুল ইসলাম (৩৫), তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার (৩০) ও তাদের ছেলে মো. হুরাইরা (১২), গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৫৫) এবং সিএনজি চালক মোক্তার হোসেন (৬০)। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা পাঁচজন যাত্রী নিয়ে কালিয়াকৈরের উদ্দেশে রওনা দেয়। পথে কালিয়াকৈর উপজেলার বড়চালা এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা কাভার্ডভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজি অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে সড়কের পাশে ছিটকে পড়ে। এসময় ঘটনাস্থলেই যাত্রী জাহিদ ও তার ছেলে হুরাইরা নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় জাহিদের স্ত্রী ও সিএনজি চালকসহ অন্য যাত্রীদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে জাহিদের স্ত্রী নাসরিন আক্তার ও শফিকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য আহত সিএনজি চালক মোক্তার হোসেনকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকালে তিনি মারা যান।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মান্নান জানান, নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের লাশ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করলেও কাভার্ডভ্যানের চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে।
মেহেরপুর প্রতিনিধি : গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামে দ্রুতগামী মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মন্টু মিয়া (৫০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এসময় মোটরসাইকেল চালকসহ দুজন আহত হন। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের তেরাইল নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মন্টু মিয়া ওলিনগর গ্রামের মৃত কাতান মালিথার ছেলে। আহত মোটরসাইকেল চালক ছাতিয়ান গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে মোস্তাক হোসেন (২০) ও তার বন্ধু তেরাইল পূর্বপাড়ার রতন আলীর ছেলে রনি (১৮)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মন্টু মিয়া রাস্তা পার হচ্ছিলেন এ সময় দ্রুতগামী একটি মোটরসাইকেল তাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় পড়ে তিনজন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে দ্রুত গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মন্টু মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত দুজনকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানী ইসরাইল বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি : সাদুল্লাপুরে ইটবোঝাই ট্রাক্টরের ধাক্কায় এনামুল হক (২২) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা ট্রাক্টরের চালক ও হেলপারকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর মিয়ার বাজার (রহমতপুর) ব্রিজ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত এনামুল হক রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রহমতপুরের বউলবাড়ী গ্রামের বেলাল মিয়ার ছেলে। তিনি ছোটবেলা থেকেই নলডাঙ্গার ওই গ্রামের নানা মৃত শামছুল হকের বাড়িতে বসবাস করতেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে নানাবাড়ি থেকে বের হন এনামুল। পরে নলডাঙ্গা-রহমতপুর ব্রিজ পার হওয়ার সময় একই দিক থেকে থেকে আসা একটি দ্রুতগতির ইটবোঝাই ট্রাক্টর তার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি ছিটকে পড়ে ট্রাক্টরের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা ট্রাক্টর ও চালক-হেলপারকে আটক করে। তবে ঘটনাস্থলে সাদুল্লাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুকুমারের উপস্থিতিতে মালিক পক্ষের লোকজন জোরপূর্বক ট্রাক্টরটি নিয়ে যায়। এতে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজ উদ্দিন খন্দকার বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় ট্রাক্টরের চালক ও হেলপারকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে।