রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ১ জুলাই। দেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম এ জঙ্গি হামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
নৃশংস এ ঘটনায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। তবে হাই কোর্টে এসে সাজা কমে যায় সাত জঙ্গির। মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে তাদের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় দেন হাই কোর্ট। সম্প্রতি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল নামের পাঁচ তরুণ জঙ্গি ঈদুল ফিতরের এক সপ্তাহ আগে পিস্তল, সাব মেশিনগান আর ধারালো অস্ত্র হাতে ঢুকে পড়েছিল হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়। জবাই করে, গুলি চালিয়ে তারা ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে। হামলা ঠেকাতে গিয়ে প্রাণ হারান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে সেখানে কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। ওই হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার রায় হয় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান নব্য জেএমবির এই সাত সদস্যকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। প্রাণদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। এ ছাড়া সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরও দুটি ধারায় তাদের কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড। বিচারিক আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিলে, সে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাই কোর্টের অনুমোদন লাগে। এ জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে বিচারিক আদালতের রায়ের পর মামলার যাবতীয় নথি হাই কোর্টে পাঠাতে হয়; যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট এ মামলার নথি আসে হাই কোর্টে। পরে দণ্ডিতরাও বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল ও জেল আপিল করে। গত বছর শুরুর দিকে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল-জেল আপিলে শুনানি শুরু হয়। শেষ হয় গত বছর ১১ অক্টোবর। ৩০ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন হাই কোর্ট। রায়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে সাত জঙ্গিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন হাই কোর্ট।
দণ্ডিতরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আবদুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।
উচ্চ আদালত রায়ে বলেন, দেশি-বিদেশি ২০ জন নাগরিকসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে যে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তাতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা ছাড়া এ নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডটি জনসাধারণের মনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করে।