৫০ কোটি টাকার বেশি বকেয়া থাকায় আলোচিত সুরক্ষা অ্যাপের নিয়ন্ত্রণ পাচ্ছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। টাকাটা পাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।
অ্যাপটির কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দিক নিয়ন্ত্রণ করছে এই দুটি প্রতিষ্ঠান। সুরক্ষা ওয়েবসাইট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ জনগণ। কারও করোনা ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হলে সেটা অ্যাপের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে না। আগে এ সুবিধাটা সহজেই পাওয়া যেত। সুরক্ষা অ্যাপের ওয়েবসাইটটি অকার্যকর অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। কারও করোনা ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হলে ছুটতে হচ্ছে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। সেখানে একজন কর্মকর্তাকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে সেবা দিতে পারছেন না। অ্যানালগ পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট বের করে দেন। সেটা করতে হলেও তাকে সহযোগিতা নিতে হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের। ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট আপাতত বাধ্যতামূলক না হওয়ায় এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ওপর চাপ কম। তবে বিদেশে যাচ্ছেন এমন অনেকেই সার্টিফিকেট সংগ্রহ করছেন। সম্প্রতি আবারও করোনা বাড়তে থাকায় ভ্রমণের অতিরিক্ত নিরাপত্তার কারণে তারা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করছেন। কিন্তু এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে।
মিরপুরের বাসিন্দা শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আবারও করোনা বাড়ছে। পরিবারসহ বিদেশে যাব। তাই করোনা ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট সঙ্গে রাখা দরকার বলে মনে করছি। কিন্তু সুরক্ষা অ্যাপের সার্ভিস বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করি। তারা দুই দিন ঘুরিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে সার্টিফিকেট দেয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক মাস আগেও সার্টিফিকেটের জন্য তেমন কেউ না গেলেও সম্প্রতি এই সেবা পাওয়ার লোকের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সুরক্ষা অ্যাপ কাজ না করায় তাদের ছুটতে হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। রাজধানীর বাইরে যারা এখন ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট নিতে চান তাদের আসতে হচ্ছে রাজধানীতে। এ ধরনের দুর্ভোগ কবে মিটবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে, গত ৬ মাসে ৫ হাজার ২৮২ জন করোনা পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে আক্রান্ত পাওয়া গেছে ৪১৩ জন। মারা গেছে ১৬ জন। এতে আরও বলা হয়েছে, ৬ মাসের মধ্যে গত রবিবার এক দিনে সবচেয়ে বেশি ৬২১ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে আক্রান্ত পাওয়া গেছে ৩৬ জনকে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিষয়টি সমাধানে এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। চিঠি চালাচালি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং কম্পিউটার কাউন্সিল অর্ধকোটি টাকার বেশি পাবে। ওই বকেয়া টাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিশোধ করেনি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। বকেয়া পেলেই সুরক্ষা অ্যাপের নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সাদা চোখে সুরক্ষা অ্যাপ্লিকেশনের কাজ খুব সহজ মনে হলেও এটি বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। কেউ টিকার জন্য নিবন্ধন করতে চাইলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করা হয়। ডায়াবেটিস, ক্যানসার, শ্বাসকষ্টসহ টিকা জটিলতাসংক্রান্ত কিছু তথ্য, আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা অনুসারে টিকা কেন্দ্র বাছাই করার সুযোগ দেওয়া হয়। ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড ভেরিফাই করে যে কোনো আবেদনকারীর আবেদন গ্রহণ করা হয়। আবেদনকারীর আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আবেদনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট টিকা কেন্দ্রে পৌঁছে যায়। সেই টিকা কেন্দ্র নিজেদের টিকাদান করার ক্ষমতা অনুসারে ধারাবাহিকভাবে আবেদনকারীদের সময় ও বুথ নির্দিষ্ট করে সিষ্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেসেজ পাঠিয়ে থাকে। নিবন্ধন-পরবর্তী যে কোনো সময় আবেদনকারী সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল বা অ্যাপ থেকে টিকা কার্ড ডাউনলোড করতে পারেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দুটি ডোজ সম্পন্ন করার পর ভ্যাকসিন সনদও গ্রহণ করতে পারেন। নির্দিষ্ট দিনে আবেদনকারী টিকা কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নেওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে সেই তথ্য টিকাদান কেন্দ্র থেকে সার্ভারে আপডেট দেওয়া সম্ভব হয়। কোন টিকা, কত তারিখ দেওয়া হলো-থাকে সেসব তথ্যও। আবেদনকারীর টিকা কার্ডের তথ্য সঠিক কি না, তা সুরক্ষা অ্যাপ থেকেও যাচাই করা যায়।