শিল্প ও বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের মধ্যে শুল্কহারে মারাত্মক বৈষম্যের কারণে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা। অন্যদিকে একটি অসাধু গোষ্ঠী কাঁচামাল শিল্পে ব্যবহার না করে খোলা বাজারে বিক্রি করে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী কয়েকজন বাণিজ্যিক আমদানিকারক অর্থ উপদেষ্টাকে দেওয়া এক চিঠিতে জানায়, একটি অসাধু চক্র পাইপ, স্টিল বিল্ডিং তৈরির লাইসেন্স ব্যবহার করে শিল্পের নামে বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি করে খোলা বাজারে বিক্রি কর দিচ্ছে। এতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে তাঁরা অপ্রত্যাশিত মুনাফা করলেও বৈধ বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা পড়েছেন চরম বিপদে। তথ্যমতে, হট রোল্ড কয়েল/শিট
প্রাইম কোয়ালিটি আমদানিতে শিল্প আমদানিকারকরা প্রতি টনে কর দিচ্ছেন মাত্র ১৫ হাজার ৩৭২ টাকা। যেখানে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের দিতে হচ্ছে ২৫ হাজার ৮৭২ টাকা। এক্ষেত্রে টনপ্রতি বাড়তি দিতে হচ্ছে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। আবার, এইচডিজি (হট-ডিপ গ্যালভেনাইজড) কয়েল/শিটের বেলায় বাণিজ্যিক আমদানিতে কর ৫৬ হাজার ৪১২ টাকা, আর শিল্প আমদানিতে দিতে হয় ২৭ হাজার ৮১৬ টাকা। এতে পার্থক্য দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৫৯৬ টাকা। এ ছাড়া শিল্প আমদানিকারকদের রেগুলেটরি ডিউটি না থাকলেও বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের সেটি ১০ শতাংশ হারে দিতে হয়। আশ্চর্যজনকভাবে, এক জাহাজে আসা একই পণ্যের প্রাইম কোয়ালিটির শুল্ক মূল্যায়ন সেকেন্ডারি কোয়ালিটির চেয়েও ১০০ থেকে ১২০ ডলার কমে করা হচ্ছে। এসব কারণে গত দেড় বছর ধরে সাধারণ বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা এ পণ্য আমদানি করছে না। এ সুযোগে অসাধু চক্র বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করে বাজারে বিক্রি করছে। এতে বাজারে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। চিঠিতে বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা অর্থ উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, এ অবস্থায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর প্রভাব পড়ছে। কৃষি যন্ত্রপাতি, গৃহস্থালি পণ্য, আসবাবপত্র, নির্মাণ, গার্মেন্ট ও পোলট্রি খাত এসব বাণিজ্যিক আমদানির ওপর নির্ভরশীল। এতে লাখ লাখ শ্রমিক ও কর্মজীবী মানুষ জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, শিল্পের জন্য আমদানি পর্যায়ে যে শুল্ক ও রেআত সুবিধা সরকার দিচ্ছে সেটা উৎপাদন পর্যায়ে দেওয়া হোক। হটরোলড কয়েলস ও ইলেকট্র গ্যালভানাইজড কয়েলস বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। এ পণ্য উভয় (শিল্প ও বাণিজ্য) আমদানিকারকরা শিল্পে ব্যবহার করে। প্লাটস ও এলএমই মূল্যায়নের সুবিধা উভয় পক্ষকে দেওয়া বা শুল্ক নির্ধারণে কাস্টমস ডাটাবেজ যাচাই বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন। শিল্পের জন্য আমদানিকরা পণ্য খোলা বাজারে বন্ধের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি রোধে জরুরি নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া অনুরোধ করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল মহলের হস্তক্ষেপ না এলে দেশে বৈধ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা। সরকার দ্রুত শুল্ক বৈষম্য নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।