রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্যের কারণে স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও বাংলাদেশে শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করা সম্ভব হয়নি। পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর ও সময়োপযোগী করতে হলে আগে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। একটি সুসংহত জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া পররাষ্ট্রনীতি শক্তিশালী করা সম্ভব নয়।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ : পররাষ্ট্রনীতি’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সিজিএস সভাপতি জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সাবেক কূটনীতিক এম শফিউল্লাহ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সাবেক চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ, মিয়ানমারের সাবেক কনস্যুলেটপ্রধান ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, নৈতিক সমাজ বাংলাদেশের সংগঠক মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আ আমিন, সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী, কূটনীতিক শহীদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর প্রমুখ।
সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি কেবল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। এর মূল নির্দেশনা আসে সরকারপ্রধানের কাছ থেকে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ মতভেদ ও দ্বন্দ্বের কারণে সে নির্দেশনা দুর্বল হয়ে পড়ে। আমরা দলীয় স্বার্থে বাইরের শক্তিকে ব্যবহার করার ঝুঁকিপূর্ণ প্রবণতা দেখছি, যা রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি দুর্বল করে দেয় এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করে তোলে। যতদিন এ প্রবণতা চলবে, ততদিন পররাষ্ট্রনীতি শক্তি পাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত ৫৪ বছরে মাত্র দুবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অথচ বিশ্বে বহু দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন নিয়মিত তাদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতির রিভিউ করে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি সময়োপযোগী করে তুলতে পারছি না, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের অবস্থান দুর্বল থাকবে।’
মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিফলিত হয় নাই। আমলাদের পাশাপাশি ফরেন পলিসিতে প্রাইভেট সেক্টর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ক্লাইমেট ডিপ্লোম্যাসি নিয়ে আমাদের কাজ শুরু করতে হবে। প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য দূতাবাসগুলো শক্তিশালী করার পাশাপাশি সার্ক আবার পুনর্জীবিত করতে হবে।’ জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘আঞ্চলিক জোট হিসেবে সার্ক ছাড়া আর বিকল্প নেই আমাদের জন্য। আঞ্চলিক সম্পর্ক গভীর করার জন্য সার্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ মাহাদী আমিন বলেন, ‘আমাদের এখন মতামতের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ম্যারিটাইম ও আইটি সিকিউরিটি শক্ত করতে হবে। পানিসংকট সমাধানের জন্য বাইল্যাটেরাল ও মাল্টিল্যাটেরাল নেগোসিয়েশন করতে হবে।’
এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘ন্যাশনাল কনসেনসাস অন ফরেন পলিসিতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের একমত হতে হবে। এটি না হলে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কাজও পরিবর্তন হয়ে যায়। রাজনীতিবিদদের কাছে অনুরোধ-আপানারা আপনাদের অভ্যন্তরীণ পলিটিকস দেশের মধ্যে রাখেন, এইটা বাইরে নিবেন না।’
মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য থাকা দরকার। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের নীতি ঠিক করতে হবে। পররাষ্ট্রনীতি নির্ভর করে আমাদের অভ্যন্তরীণ শক্তির ওপর। এর জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা ঠিক করতে হবে।’
মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আ আমিন বলেন, ‘ভারত, আমেরিকা, ইসরায়েল সবারই ফরেন পলিসি ইন্টেলিজেন্স আছে। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো ফরেন পলিসি ইন্টেলিজেন্স নেই।’