পাকা মরিচের লাল রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়। জেলার প্রায় সব উপজেলায় বাড়ির আনাচে-কানাচে, বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে মরিচ চাষ করেছেন চাষিরা। গত এক যুগে মরিচ চাষ করে গুণে-মানে আর দামে বাজিমাত করেছেন তাঁরা। পঞ্চগড়ের মরিচের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। তবে চাষিরা বলছেন, বাজার এবার মন্দা। আগের মতো দাম নেই মরিচের। পরিশ্রম, চাষের খরচ, সার-কীটনাশকের দাম, শ্রমিকের ব্যয় মিটিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হওয়ায় এ বছর ফলনও কম হয়েছে। অনেকের অভিযোগ, ভেজাল সার-কীটনাশক প্রয়োগ করে কোনো লাভ হয়নি। এ ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও কোনো সহযোগিতা নেই। তবে মরিচ ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, সারা দেশে পঞ্চগড়ের মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বোদা উপজেলার হাবসীপাড়া গ্রামের চাষি মোশারফ হোসেন জানান, পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি থাকায় এবার ফলন ভালো হয়নি। বাজারে যে কীটনাশক পাওয়া যায়, তাতে পোকা দমন হয় না। কৃষি অফিসের সহযোগিতাও পাওয়া যায় না। বাজারে মরিচের দামও কম। লোকসানের আশঙ্কাই বেশি। মরিচ শুকাতে অনেক পরিশ্রম আর কষ্ট হয়। এজন্য প্রযুক্তি প্রয়োজন। সরকার চাষিদের মরিচ শুকানোর প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দিলে ভালো হয়। চাষিদের লাল সোনার দাম কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে শ্রমিকদের ওপরও। ন্যায্য শ্রমমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ তাদের। মরিচ তোলার কাজে সবচেয়ে বেশি জড়িয়েছেন নারী শ্রমিকরা। তাঁরা বলছেন, ৬ থেকে ৭ টাকা কেজি দরে তাঁরা খেত থেকে মরিচ তোলেন। সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পান। মরিচের সবচেয়ে বড় হাট বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ বাজারে ক্রেতা সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ী আবদুল জলিল জানান, পঞ্চগড়ের মরিচের অনেক সুনাম। দামও বেশি। সারা দেশে চাহিদা রয়েছে। তবে মরিচ শুকানোর ক্ষেত্রে এখনো প্রযুক্তি আসেনি এ এলাকায়। এখনো রোদে শুকানোর কারণে অনেক মরিচ নষ্ট হয়ে যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল মতিন বলেন, পঞ্চগড়ে উৎপাদিত মরিচ কৃষি অর্থনীতিতে বড় জায়গা করে নিয়েছে। মরিচ চাষে লাভবান হওয়ায় অর্থকরী ফসল হিসেবে বেছে নিয়েছেন কৃষক। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। ৮ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চাষিরা আবাদ করেছেন ৯ হাজার ১৪৫ হেক্টরে।