মুসলিমদের অন্যতম পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের সময় যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েলের কতিপয় জিম্মিকে মুক্তি দিতে পারে হামাস। এমনটাই দাবি করা হয়েছে ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম কানের প্রতিবেদনে। সম্ভবত একজন ইসরায়েলি সেনাকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে এই প্রক্রিয়ায়। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে কানের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যস্থতাকারীরা মনে করছেন, হামাসের কতিপয় জ্যেষ্ঠ নেতা ঈদুল ফিতরের ছুটিতে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য অল্পসংখ্যক জিম্মিকে মুক্তি দিতে ইচ্ছুক।
অবশ্য কান জানিয়েছে, এদান আলেকজান্ডারের মুক্তির বিনিময়ে হামাস কী চাইবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার নিবিড়ভাবে জড়িত। কানের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ যুদ্ধবিরতি চাওয়া যতটা না ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক, তার চেয়ে বেশি গাজায় হামাসবিরোধী বিক্ষোভের কারণে। কানের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, হামাস বিক্ষোভকারীদের দমন করতে চায় এবং ইসরায়েল গাজায় পুনরায় অভিযান শুরু করায় তা করতে পারছে না। এ অবস্থায় কয়েক দিনের জন্য হলেও একটি যুদ্ধবিরতি হামাসকে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। কানের এ প্রতিবেদন এমন এক সময় এলো, যখন এর একদিন আগে একজন জ্যেষ্ঠ আরব কূটনীতিক টাইমস অব ইসরায়েলকে বলেছিলেন, কাতার হামাসকে একটি নতুন মার্কিন প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাবে এদান আলেকজান্ডারের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি পুনরায় শুরু করা হবে। বিনিময়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় শান্তির আহ্বান জানাবেন এবং যুদ্ধ অবসানের জন্য আলোচনা পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি দেবেন। হামাস এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের এক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। ওই প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে হামাস জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্তে অটল ছিল। সেই ধাপে অবশিষ্ট জীবিত জিম্মিদের মুক্তি, গাজা থেকে সম্পূর্ণভাবে আইডিএফের প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের সমাপ্তির কথা বলা হয়েছিল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসের সামরিক ও শাসনক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে না দেওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ করতে অস্বীকার করেছেন এবং যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশও করতে অস্বীকার করেছেন। পরিবর্তে তিনি প্রথম ধাপের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অচলাবস্থার পর ইসরায়েল ১৮ মার্চ গাজাজুড়ে তীব্র সামরিক অভিযান ফের শুরু করে। হামাস এখনো সর্বশেষ মার্কিন প্রস্তাবের জবাব দেয়নি, তবে কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা গোষ্ঠীটিকে বলেছে, এ প্রস্তাবে সম্মত হলে ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের সদিচ্ছা তৈরি হবে, যার ফলে তিনি নেতানিয়াহুকে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর জন্য আরও বেশি উৎসাহিত হবেন, কূটনীতিক যোগ করেছেন। ইসরায়েল এর প্রতিক্রিয়া কীভাবে জানাবে তাও স্পষ্ট নয়। মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনার মধ্যেই হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা শুক্রবার বলেছেন, আলোচনা গতি পাচ্ছে। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা আশা করি মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নিবিড় যোগাযোগের ফলে আগামী দিনগুলোতে যুদ্ধ পরিস্থিতির একটি সত্যিকারের অগ্রগতি হবে। নাইম বলেছেন, আলোচনা ‘যুদ্ধবিরতি অর্জন, সীমান্ত ক্রসিং খোলা এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার’ লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- প্রস্তাবের লক্ষ্য ‘দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা পুনরায় শুরু করা, যা অবশ্যই যুদ্ধের সম্পূর্ণ সমাপ্তি এবং দখলদার বাহিনীর প্রত্যাহারের দিকে ধাবিত করবে।