যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে গত দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি তহবিল দিয়ে সহায়তা করেছে। তবে হঠাৎ করেই এ তহবিল কাটছাঁট করায় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে যক্ষ্মা প্রতিরোধ কর্মসূচি। এর প্রভাব পড়বে গবেষণা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমে। এ অবস্থায় সরকারকে সচেতনতামূলক কার্যক্রমে জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে ২০২৪ সালে দেশে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬২৪ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসার আওতায় আছে ৮৩ শতাংশ রোগী। বাকি প্রায় ১৭ শতাংশ রোগী এখনো রয়েছে শনাক্তের বাইরে। শনাক্তের বাইরে থাকা এসব রোগী যক্ষ্মার জীবাণু ছড়াচ্ছে এবং আরও রোগী বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, ইউএসএআইডির অর্থায়নে আইসিডিডিআরবির প্রায় সাত থেকে আটটি প্রকল্প চলমান ছিল। এগুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে যারা কাজ করতেন তাদেরও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে যক্ষ্মার সক্রিয় রোগী সন্ধান, স্ক্রিনিং ও সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ করা হতো।
এদিকে গত ৯ মাস থেকে স্বাস্থ্যের কোনো অপারেশন প্ল্যান (অপি) নেই। অপারেশন প্ল্যান না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সেবা। এ প্ল্যানের মাধ্যমে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিও ছিল। ইউএসএআইডির সহায়তায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকেও যক্ষ্মা নিয়ে গবেষণা প্রকল্প ছিল। গত জানুয়ারিতে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। সংস্থাটির যক্ষ্মা কর্মসূচির লিড টেকনিক্যাল ডা. ফারহানা নিশাত সেহেলী বলেন, গত জানুয়ারি থেকে ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলমান গবেষণা প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। দুই মাসে তেমন কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। এসব কর্মকাণ্ড দীর্ঘমেয়াদি বন্ধ থাকলে প্রভাব পড়বেই। ২০২১ সালে ইউএসএআইডির সহায়তায় রাজধানীর শ্যামলীতে দেশের প্রথম ওয়ান স্টপ যক্ষ্মা (টিবি) সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়। শ্যামলী ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ হাসপাতালে ওয়ান স্টপ টিবি সার্ভিস সেন্টার যক্ষ্মা রোগীদের সেবা চলমান আছে। বর্তমানে হাসপাতালে ২১ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে পাঁচজন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় (এমডিআর টিবি) আক্রান্ত। ইউএসএইডের অর্থায়নে ওয়ান স্টপ টিবি সেন্টারে একজন চিকিৎসক দেওয়া হয়েছিল। তিনি মূলত এমডিআর টিবি আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয় দেখতেন। অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেলে ওই চিকিৎসককে সরিয়ে নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রোগীদের সেবা চলমান রাখতে আমাদের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে। তারাই সার্বিক চিকিৎসা দিচ্ছেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিভাগীয় যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো যেহেতু ভালো তাই ইউএসএআইডির ফান্ড বন্ধ হওয়ার কারণে আফ্রিকান দেশগুলোর মতো আমাদের দেশে তেমন প্রভাব পড়বে না। দেশে যক্ষ্মা চিকিৎসার বড় দাতা যেহেতু গ্লোবাল ফান্ড তাই খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে ইউএসএআইডির যে সহায়তা ছিল তা থাকলে আরও ভালো হতো। সচেতনতা বৃদ্ধিতে তাদের কিছুটা কাজ ছিল, এ জায়গায় অভাব হবে।
পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে আমরা সফলতা অর্জন করেছি। ইউএসএইডের অর্থায়নে মূলত এমডিআর টিবি রোগীদের সেবার বিষয়টি দেখা হতো। এমডিআর টিবিতে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। এটা নিয়ন্ত্রণে রাখার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে। তারপরও যদি কোথাও সমস্যা মনে হয়, তাহলে সরকারকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। শুধু ওষুধের জোগান নিশ্চিত করতে পারলে খুব একটা সমস্যা হবে না।