জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে ১৬৬ প্রস্তাবের মধ্যে খেলাফত মজলিস ১৪০ এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টি ১৪৭টির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছে। গতকাল জাতীয় সংসদের এলডি হলে প্রথমে খেলাফত মজলিস ও পরে লেবার পার্টির সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। আজ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন সংলাপে অংশ নেবে। অন্যদিকে আজ দুপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও সিপিবির লিখিত মতামত জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
গতকাল সংলাপে অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে ১৩ এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেয়।
সংলাপ বৈঠকে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা মনে করি আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা একটা জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে পারব। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানোই লক্ষ্য।’
বৈঠক শেষে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ প্রস্তাবের মধ্যে ১৪০টিতে আমরা একমত হয়েছি। ১০টিতে মতৈক্য হয়নি, আর ১৫টিতে আংশিকভাবে সম্মত হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি প্রয়োজনীয় সংস্কার ১০ মাসে করা সম্ভব। এটা অধ্যাদেশ জারি করে করা উচিত। বিদ্যমান সংস্কার নির্বাচনের আগেই সম্ভব।’ খেলাফত মজলিস গণপরিষদের পক্ষে নয় বলে জানান আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা ৪০০ আসনে নারীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছি। সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর রাখার পক্ষে রয়েছি। এ ছাড়া উচ্চকক্ষে (সিনেট) সংখ্যালঘুদের ১ শতাংশ ভোটের ভিত্তিতে আসন বণ্টনের অনুরোধ জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধানে মহান আল্লাহর প্রতি আস্থা-বিশ্বাস রাখতে হবে। বহুত্ববাদ (সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব) বাদ দিতে হবে। আমরা বলেছি গণতন্ত্রই এনাফ, বহুত্ববাদের কোনো প্রয়োজন নাই। ইসলামের স্পষ্ট বিরোধী কোনো আইন করা যাবে না, তা সংবিধানে বিধান থাকতে হবে। সংবিধান সংশোধন অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা সম্ভব, তবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের মতামত নেওয়া যেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘ফ্যসিবাদ ও তাদের দোসর যারা, তাদের বিচার করতে হবে। বিচারে যদি কেউ নিরপরাধ প্রমাণিত হয়, তখন নির্বাচনে আসতে পারে। এ মুহূর্তে কোনো সুযোগ নেই। অনেকের মতো আমরাও আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার বিষয়ে রাজি না। কারণ তারা খুন করে মানুষ মারার বিষয়ে ক্ষমা চায়নি।’
এদিকে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান জানান, তাঁরা ১৪৭টি সুপারিশে একমত হয়েছেন, সাতটিতে মতপার্থক্য রয়েছে এবং ১২টিতে আংশিকভাবে সম্মত হয়েছেন। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের পক্ষে মত দিলেও তাঁর দল দেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ করার বিপক্ষে, কারণ এতে ‘নানা সমস্যা তৈরি হবে’। এ ছাড়া জেলা পরিষদ কার্যকরের প্রস্তাবও তাঁরা দিয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বারদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচনের পরিবর্তে আগের নিয়মে সরাসরি ভোটে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পাঁচ বছর পর একজন ব্যক্তি নির্বাচনে যাওয়ার উপযুক্ত হবেন এমন বিধান করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চাই। শুধু দলটি নয়, তাদের দোসর জাতীয় পার্টি সমানভাবে দোষী। ২০১৪, ’১৮ ও ’২৪ সালের নির্বাচন সম্ভব হয়েছে জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দল সঙ্গে থাকায়। যে দোষে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি, একই দাবিতে জাতীয় পার্টিসহ দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফের ক্ষমতায় বসানোর জন্য বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এটা রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।’