ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রেলপথে যাত্রীদের ভ্রমণ স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। প্রতি বছরের মতো এবারও টিকিট ছাড়া ট্রেনে যাত্রীপরিবহন, অতিরিক্ত যাত্রীচাপ এবং শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া রেলওয়ে গেটকিপাররা চাকরি জাতীয়করণ দাবিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ২৪ মার্চের মধ্যে তাঁদের চাকরি স্থায়ীকরণের ঘোষণা দেওয়া না হলে ঈদযাত্রার প্রথম দিন থেকেই সারা দেশে রেলপথ অবরোধ ও কর্মবিরতিতে যাবেন গেটকিপাররা।
এদিকে গতকাল ৩০ মার্চের টিকিট বিক্রির মধ্য দিয়ে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকালও সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট ছাড়ার পর নিমেষেই শেষ হয়ে যায় টিকিট। উত্তরের বিভিন্ন জেলার ট্রেনের টিকিট পাওয়া ছিল যেন সোনার হরিণ হাতে পাওয়া। ঈদযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন গন্তব্যের নন-এসি বাসের ভাড়া কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে বাড়তি নেওয়া হলেও এসি (শীতাতম নিয়ন্ত্রিত) ও স্লিপার বাসে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। জানা গেছে, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলায় বাসভ্রমণের ক্ষেত্রে এসি ও স্লিপার বাসে সাধারণত ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা, যা প্রায় দ্বিগুণ।
অভিযোগ রয়েছে, ঈদে বাড়ি ফেরা উপলক্ষে ফেসবুকসহ সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন পেজে টিকিট বিক্রির প্রচার চালাচ্ছেন কেউ কেউ। আর বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজনীয় টিকিট না পেয়ে অনেকে সমাজমাধ্যম থেকে চড়া দামে এসব টিকিট কিনছেন। তবে বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র বলছেন, রেলওয়ে অ্যাপস আর টিকিট করার নির্ধারিত ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে টিকিট কিনে প্রতারিত হলে এর দায় সংশ্লিষ্ট যাত্রীকেই নিতে হবে। আর ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ নীতি নিশ্চিত করতে অন্যের টিকিটে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর ঈদযাত্রা উপলক্ষে টিকিটবিহীন যাত্রী ঠকানো, প্ল্যাটফর্মে টিকিট ছাড়া কাউকে ঢুকতে না দেওয়া, তল্লাশিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া প্রহরা লক্ষ করা যায়। যাত্রীচাপ ঠেকাতে প্রতি বছর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনের বাইরে বাঁশের বেষ্টনী দেওয়া হয়। এর পরও যাত্রীস্রোত ঠেকাতে ব্যর্থ হন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতি বছরই দেখা যায়, ট্রেনের ছাদ পর্যন্ত যাত্রীতে ঠাসা থাকে। নিরাপত্তার অভাব, টয়লেট ও পানিসংকট এবং ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় যাত্রীদের দুর্ভোগ তখন আরও বাড়িয়ে তোলে। যাত্রীরা বলছেন, রেলওয়ের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা। গতকাল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, এবারও বাঁশের বেষ্টনী দিয়ে টিকিটবিহীন যাত্রী ঠেকানোর আয়োজন চলছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ ট্রেন চালু, অতিরিক্ত কোচ সংযোজন ও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রতি বারই যাত্রীচাপ সামাল দিতে না পেরে এসব ব্যবস্থা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায় না। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইন টিকিটব্যবস্থা আরও উন্নত করা, ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো ও সময়সূচি কঠোরভাবে মেনে চলা জরুরি। এ ছাড়া যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য রেলওয়ের মনিটরিংব্যবস্থাও আরও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে ঈদযাত্রায় প্রতিটি বগির গেটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া প্রহরা থাকা দরকার।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন গতকাল প্রতিবেককে বলেন, ‘ঈদে রেলযাত্রা নির্বিঘ্ন ও আনন্দময় করতে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। টিকিটবিহীন যাত্রী ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকবে।’