পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নে বিশাল জায়গা নিয়ে নির্মিত কুঠিবাড়ি প্রাসাদ। সোয়া ৯ একর জমির ওপর নির্মিত হয় ক্যাসপারের কুঠিবাড়ি। স্থানীয়ভাবে যার নাম সাপলেজা কুঠিবাড়ি। আনুমানিক ১৮ শতকের গোড়ায় ইংরেজ জমিদার এডওয়ার্ড প্যারি ক্যাসপার এ কুঠিবাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। ৩০০ বছরের এই কুঠিবাড়ি সুরক্ষার অভাবে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
স্থানীয়রা জানান, ১৮ শতকের গোড়ায় জনৈক ইংরেজ জমিদার এডওয়ার্ড প্যারি ক্যাসপার ঘটনাক্রমে সাপলেজা ভ্রমণকালে স্থানীয় ধনাঢ্য ফরাজউল্লাহ তাকে সম্মানিত করতে ওই জমি উপহার দেন। পরবর্তীকালে এখানে ক্যাসপারের জমিদারি সম্প্রসারিত হয়। প্যারি ক্যাসপারের উপস্থিতিতে প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ ভাগে কুঠিবাড়িতে পুণ্যাহ উৎসব উপলক্ষে খাজনা আদায়সহ প্রজাদের মনোরঞ্জনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। এর মধ্যে জাদু প্রদর্শনী, লোকগান, যাত্রা ও নিমাই সন্ন্যাস পালায় প্রচুর লোক সমাগম হতো। কুঠিবাড়ির মূল ভবন নির্মাণে প্রচলিত ধারার ব্রিটিশ স্থাপত্যরীতিতে চৌকোণাকৃতির ১৮টি খিলানের ওপর দোতলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত ছিল। এ ছাড়া অন্যান্য স্থাপনা ও বড় একটি পুকুর। কুঠিবাড়ির ওপরের তলায় প্যারি ক্যাসপারের ব্যবহৃত মূল্যবান সামগ্রী ও তৈজসপত্র ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ব্রিটিশরা চলে গেলে ভবন ও সম্পত্তি তখনকার সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। অজ্ঞাত কারণে ভেঙে দেওয়া হয় মূল ভবনটির দোতলার সম্পূর্ণ অংশ। তখন এ অংশে রক্ষিত মূল্যবান মালামাল বেহাত হয়ে যায়।
কলেজ শিক্ষক আলীম চেীধুরী জানান, জমিদার ক্যাসপারের ব্যবহৃত যে দুটি তরবারিসহ কিছু তৈজসপত্র ছিল তাও এখন নিখোঁজ। শানবাঁধানো ঘাটসহ পুকুর জৌলুশহীন। কুঠিবাড়ির তৎকালীন ম্যানেজার সুরেন্দ নাথ সুর ও নায়েব সতীশ চন্দ্রর কোনো বংশধরের খোঁজ পাওয়া যায় না। সাপলেজার বাসিন্দা নুরুজ্জামান আকন জানান, সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রত্নসম্পদ। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান জানান, প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের তালিকায় নাম দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে কাজ করা হচ্ছে এবং এই স্থানটিকে স্থানীয়ভাবে রক্ষণা-বেক্ষণসহ সুন্দর পরিবেশ তৈরির কাজ করা হবে।