আসামিকে জামিন না দেওয়ায় বিচারকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের ঘটনায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলমসহ পাঁচ আইনজীবীর সনদ বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
গতকাল এক সংবাদ বিবৃতিতে এ দাবি জানান তারা। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
বাকি আইনজীবীরা হলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল খালেক মিলন, ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের প্রাথমিক সদস্য অ্যাডভোকেট মো. জাবেদ, অ্যাডভোকেট এস এম ইলিয়াস হাওলাদার ও অ্যাডভোকেট মো. জহিরুল।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গভীর ক্ষোভ ও চরম উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছে যে ১৭ মে দুপুরে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চলমান এজলাসে কিছু আইনজীবী কর্তৃক বিচারক ও বিচারকাজের প্রতি প্রকাশ্য অবমাননা, চিৎকার-চেঁচামেচি, অশ্রাব্য গালিগালাজ, অশালীন মন্তব্য, কোর্ট রুমের কজলিস্ট ছুড়ে ফেলা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের যে ন্যক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, তা দেশের বিচার বিভাগ, বিচারক ও আইনের শাসনের প্রতি সরাসরি হুমকি এবং সুস্পষ্ট ফৌজদারি অপরাধ। একপর্যায়ে এমন পরিস্থিতি হয় যে বিচারককে বাধ্য হয়ে এজলাস ত্যাগ করতে হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ ঘটনার মাধ্যমে শুধু একজন বিচারককে অপমান করা হয়নি, বরং গোটা দেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ভিত্তি কেঁপে উঠেছে। বিচারকের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, যা কোনোভাবেই একটি সভ্য, গণতান্ত্রিক ও আইনশাসিত দেশে গ্রহণযোগ্য নয়। এজলাসে অরাজকতা সৃষ্টি, বিচারকের প্রতি হুমকি ও অপমান এবং বিচারকাজে অবৈধ বলপ্রয়োগ দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ধারা ২২৮ ও ৩৫৩ অনুযায়ী গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। বিচারিক কর্তৃত্বকে পাশ কাটিয়ে, পেশিশক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজ পক্ষে আদেশ আদায়ের অপচেষ্টা স্পষ্টভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও শৃঙ্খলার ওপর আঘাত। এটি একটি সংগঠিত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রয়াস, যা রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোকে দুর্বল করার শামিল। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এই ঘটনাকে স্বাধীন বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতা হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি কর্তৃক ঘোষিত স্বাধীন বিচার বিভাগের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন ঘটনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করার হীন ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই কাম্য নয়, বিচারকদের অবমাননার সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন কোনো আপস করবে না। ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এবং স্বচ্ছ বিচারিক পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে অ্যাসোসিয়েশন অবিলম্বে দেশের সব এজলাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।