চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বছরে প্রায় ৪ হাজার কিডনি রোগী অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা নেয়। এর মধ্যে ৫৭ ভাগই দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী এবং ২৩ ভাগ সাময়িক কিডনি বিকল রোগী। বর্তমানে চমেক হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডে প্রায় ৩০০ রোগী এবং ১৮টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৭০০ স্থায়ী ডায়ালাইসিসের রোগী রয়েছে। তা ছাড়া কিডনি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ১৫-২০ জন সাময়িক কিডনি বিকল রোগী ডায়ালাইসিস করান। তবে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
আজ বিশ্ব কিডনি দিবস। প্রতি বছর মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হয়। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আপনার কিডনি কি সুস্থ? দ্রুত শনাক্ত করুন, কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষা করুন’। কিডনি দিবস উপলক্ষে চমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগের উদ্যোগে বৈজ্ঞানিক সেমিনার, র্যালিসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের গবেষণায় বলা হয়, কিডনি ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হলো ৩৪ ভাগ নেফ্রাইটিস, ২৮ ভাগ ডায়াবেটিস এবং ১৭ ভাগ উচ্চ রক্তচাপ। আর সাময়িক কিডনি বিকল হওয়ার কারণগুলোর অন্যতম হলো ইনফেকশন ৬০ ভাগ এবং ডায়রিয়া ১৪ ভাগ। অন্যদিকে, দেশে প্রায় ৩ কোটি কিডনি রোগী আছে। প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার কিডনি রোগী রোগের শেষ পর্যায়ে অবস্থান করে; যাদের বেশির ভাগেরই কিডনি ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজনই একমাত্র চিকিৎসা। কিডনি ডায়ালাইসিস অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দেশের বেশির ভাগ রোগীর পক্ষেই এ চিকিৎসার ব্যয় বহন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
চমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘কিডনি চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। তাই আমাদের প্রতিকারের দিকে নজর দেওয়া উচিত। সেজন্য নেফ্রাইটিস, ইনফেকশন ও ডায়রিয়ার সঠিক এবং দ্রুত চিকিৎসা করা দরকার। এ ছাড়া ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ব্যথানাশক ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনোমতেই খাওয়া যাবে না।’ জানা যায়, চমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগে শয্যা আছে ৪০টি। তবে ওয়ার্ডে গড়ে রোগী ভর্তি থাকে ৭০-৮০ জন। ওয়ার্ডে আছে চারটি এইচডিইউ শয্যা ও ১৭টি ডায়ালাইসিস মেশিন। তা ছাড়া ভারতীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত কেন্দ্র স্যান্ডরে আছে ৩১টি ডায়ালাইসিস মেশিন। ২০২৪ সালে কিডনি ওয়ার্ডের অন্তর্বিভাগে ৪ হাজার এবং বহির্বিভাগে প্রায় ৬ হাজার রোগী চিকিৎসা নেয়। এর মধ্যে ৫৭ ভাগ রোগী ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে এমন ব্যক্তিদের জেনেটিক কারণগুলো কিডনি সমস্যার প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যাদের নিকটাত্মীয়রা কিডনি রোগে ভুগছেন তাদের নিয়মিত চেকআপ করানো উচিত। হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ইতিহাস আছে, এমন ব্যক্তিদের হৃৎপি এবং কিডনি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। হৃৎপিন্ডের দুর্বল কার্যকারিতা কিডনিতে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে। এতে কিডনি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ৬০ বছরের বেশি বয়সিদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিডনির কার্যকারিতা স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়, যা বয়স্কদের কিডনি সম্পর্কিত জটিলতার জন্য বেশি সংবেদনশীল করে তোলে। নিয়মিত স্ক্রিনিং প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে।