১৯৭১ সালের মার্চ মাসে আমাদের বাড়িতে আমার বাবার রেডিও থেকে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম শুনতে পাই। ওই ঘোষণা শোনার পর মানসিক ও ব্যক্তিগত উদ্দীপনা নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। গাজীপুরের কাপাসিয়া সদরের বানারহাওলা টেকে আমরা শপথ গ্রহণ করি। জিয়াউর রহমানের ঘোষণার পর তখনকার জয়দেবপুরের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে (সমরাস্ত্র কারখানা) চাকরিরত সেনা ও কর্মচারীরা তাদের অস্ত্র পাশের গজারী বনে ও বিভিন্ন বাড়িতে রেখে চলে যান। এ ঘটনা জনৈক সালামের (অর্ডন্যান্সে চাকরি করতেন) মাধ্যমে জানতে পেরে আমরা সমরাস্ত্র কারখানার আশপাশের বিভিন্ন বাড়িতে যোগাযোগ করে তাদের (সেনা ও কর্মচারীর) ফেলে যাওয়া প্রায় ৩৫টি অস্ত্র, কয়েক বাক্স গুলি উদ্ধার করে গরুর গাড়ি দিয়ে কাপাসিয়া নিয়ে আসি। এসব অস্ত্র দিয়ে কাপাসিয়ার তেঁতুলিয়ার টেকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য অস্ত্রের ট্রেনিং শুরু করি। কিছুদিন পর কাপাসিয়া থানা থেকে অস্ত্র নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। থানায় গিয়ে ওসিকে পাওয়া যায়নি। আমরা অস্ত্রাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোককে ডাকাই। তিনি এসে থানায় ওসি না থাকার কথা জানায়। তখন আমরা থানার সব অস্ত্র ও গোলাবারুদ আমাদের দিতে বললে পুলিশ জানায়, ‘আমাদের কী হবে’। উত্তরে আমরা জানালাম, আপনারাও আমাদের সঙ্গে থাকেন। তখন তারা থানার অস্ত্রাগার খুলে দেয়। অস্ত্রাগারে থাকা প্রায় অর্ধশত অস্ত্র, কয়েক বাক্স গোলাবারুদ উত্তরখামের ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিই।
পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের পূর্বদিন ১৩ আগস্ট রাতে রামপুর, কড়িহাতা থেকে আমি ও আনোয়ার হোসেন মিলন অস্ত্রসহ শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাশে তরগাঁও থেকে জেলেদের নৌকা নিয়ে সাফাইশ্রী আসি।
বণিকবাড়ি হয়ে আমরা বর্তমান উপজেলায় আসি। সেখানে পাকিস্তানিদের স্বাধীনতা দিবস পালন বানচালের জন্য তৎকালীন সিও (উন্নয়ন)-এর বাসায় একাধিক গ্রেনেড চার্জ করি। তখন কাছাকাছি কাপাসিয়া হাইস্কুলে পাক সেনাদের ক্যাম্প ছিল।
তাই গ্রেনেড চার্জ করেই তাৎক্ষণিকভাবে নৌকাযোগে শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়ে রামপুর ক্যাম্পে চলে যাই।