ইসলামের শুরুর দিকে ঈমান আনা সাহাবিদের একজন হজরত উতবা ইবনে গাজওয়ান (রা.)। তাঁর দাবি অনুযায়ী তিনি ইসলাম গ্রহণকারী সপ্তম ব্যক্তি। তিনি দুটি হিজরতের গৌরব অর্জন করেছেন। বদর, উহুদ, খন্দকসহ প্রায় সব যুদ্ধেই রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন।
১২ হিজরিতে ইয়ামামার যুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেন তিনি।
১৪ হিজরিতে খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর সময় হজরত উতবা ইবনে গাজওয়ান (রা.) ইরাকের উপকূলীয় বন্দর উবুলা, মায়সান এবং আশপাশের এলাকা জয় করেন।
পরে তিনি দেখলেন, উবুলার স্থানীয় সংস্কৃতি বিজাতীয়, যা মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকর ছিল। তাই হজরত উতবা (রা.) খলিফার কাছে মুসলমানদের জন্য পৃথক শহর নির্মাণের অনুমতি চান।
বসরা ছিল ভারত ও পারস্যের জাহাজ নোঙরের স্থান, সেখানেই তিনি গড়ে তোলেন নতুন নগরী—‘বসরা’। তিনি ৮০০ লোক নিয়ে নগরীর ভিত্তি স্থাপন করেন। প্রতিটি গোত্রের জন্য পৃথক মহল্লা নির্ধারণ করেন। ঘরবাড়ি তৈরি হয় গাছ ও পাথর দিয়ে।
কিন্তু তিনি নিজের জন্য কোনো বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ করেননি; কাপড়ের তাঁবুতে থাকতেন।
বসরার শাসনকালে সেখানকার লোকদের ভোগবিলাসিতা দেখে তিনি চমকে ওঠেন এবং দ্বিন নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। সে সময় তিনি মসজিদে সমবেত জনতার উদ্দেশে এক প্রভাবশালী ভাষণ দেন, যা সহিহ মুসলিমসহ অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। এতে রয়েছে উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ।
তিনি বলেন, ‘হে বন্ধুগণ! এই দুনিয়া ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
এর বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে, অবশিষ্ট আছে অল্প কিছু। যেমন—কারো খাওয়ার পর প্লেটের কোণে পড়ে থাকা সামান্য উচ্ছিষ্ট। একদিন তোমরা এই দুনিয়া ছেড়ে পরকালীন চিরন্তন জগতে চলে যাবে। অতএব, সে জগতের জন্য উত্তম পাথেয় সংগ্রহ করো।’
এরপর তিনি জান্নাত-জাহান্নামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার মনে পড়ে, যখন আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গীদের মধ্যে সপ্তম ব্যক্তি ছিলাম। আমাদের খাবার বলতে ছিল শুধু গাছের পাতা। সেগুলো খেতে খেতে আমাদের ঠোঁট-চোয়াল জখম হয়ে যেত। এমন দারিদ্র্যে একদিন একটি চাদর পেলাম, সেটি দুই ভাগ করে আমি ও সা’দ ইবনে মালিক লুঙ্গি বানিয়ে পরলাম। অথচ আজ আমাদের সেই সাথিদের কেউ কেউ কোনো কোনো অঞ্চলের শাসক হয়ে গেছেন। আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, যেন আমি মানুষের কাছে বড় হয়ে যাই আর আল্লাহর কাছে ছোট হয়ে যাই।’
দায়িত্ব হস্তান্তর ও ইন্তেকাল
ছয় মাস দায়িত্ব পালনের পর তিনি খলিফার কাছে পদত্যাগের অনুরোধ জানান। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন হজরত মুগিরা ইবনে শু’বা (রা.)। হজরত উতবা (রা.) হজের উদ্দেশে মক্কা গিয়ে খলিফা উমর (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং আবারও অব্যাহতির অনুরোধ জানান। খলিফা তা না মেনে তাঁকে বসরায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
রওনার আগে তিনি দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ! আমাকে বসরায় আর ফিরায়ে নিও না।’ আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। পথে মা’দানে সালিম নামক স্থানে উট থেকে পড়ে গিয়ে ইন্তেকাল করেন। বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। হিজরি সাল ছিল ১৭ অথবা ২০।
ইবনে সা’দের বর্ণনায়, তিনি বসরার অন্তর্গত মা’দিনে বনু সুলাইম এলাকায় পেটের রোগে ইন্তেকাল করেন। তাঁর গোলাম সুওয়াইদ তাঁর মালামাল খলিফার কাছে পৌঁছে দেন। অনেকে বলেন, তিনি রাবাযা কিংবা মদিনায় ইন্তেকাল করেন। (সূত্র : আত-তাবাকাতুল কুবরা ৩/৭৩; আল-ইস্তিআব ৩/১০২৬-১০২৮; উসদুল গাবাহ ৩/৪৬১-৪৬২; আল-আলাম ৪/২০০-২০১; আল-কামিল ফিত-তারিখ ২/৩১৬-৩১৯; তারিখে ইবনে খালদুন ২/৫৪০; আসহাবে রাসুলের জীবনকথা ২/১১০-১১৩)
বিডি প্রতিদিন/মুসা