প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চূড়ান্ত বিজয়ের দাবি করলেও ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান সংবাদপত্র ইয়েদিওথ আহরোনোথ বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছে, গাজায় দুই বছরের দীর্ঘ যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর মূলত গোপন পরাজয়ই বরণ করেছে। পত্রিকাটি তাদের এক বিস্ফোরক প্রতিবেদনে গাজা শান্তি চুক্তি নিয়ে নেতানিয়াহুর গভীর ছাড় এবং জনসাধারণ থেকে সত্য গোপন করার চাঞ্চল্যকর বিবরণ প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হিব্রু ভাষার দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথ ইসরায়েলের এই অভিযানকে বড় পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা লিখেছে, দিনটি (৭ অক্টোবর, ২০২৩) ইসরায়েলের ইতিহাস চিরতরে বদলে দিয়েছিল। তার দুই বছর পরেও ধাক্কা থামেনি। পত্রিকাটি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এবং তার শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই বলে তোপ দেগেছে যে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের বিরুদ্ধে বিজয় দাবি করা কেবলই একটি ভ্রান্ত ফাঁদ। পত্রিকাটির মতে, বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও নিজেদেরকে গল্প শোনানোর এবং বিশ্বাস করানোর মানুষের যে ক্ষমতা, তা আনন্দদায়ক হলেও এটি আসলে একটি প্রতারণামূলক ফাঁদ। যে নিরাপত্তা বাহিনীকে আমরা অজেয় বলে ভাবতাম, সে যখন আকস্মিকভাবে ধরা পড়ে এবং মারাত্মক আঘাতের শিকার হয়, তখন সন্দেহ তুঙ্গে ওঠে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে, গল্পগুলো নিজেরাই কথা বলে।-প্রেস টিভি
কী ঘটেছে তা যখন বোঝা কঠিন হয়, তখন আমরা এমন একটি গল্পের সন্ধান করি যা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে; এমনকি তা সত্য থেকে দূরে হলেও। ঠিক এ কারণেই দুই বছর পরও কেউ সত্য জানে না, কিন্তু সবাই তা নিয়ে নিশ্চিত। ইয়েদিওথ আহরোনোথ গাজায় সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়েও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে। পত্রিকাটি জানিয়েছে, চুক্তিতে নেতানিয়াহু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আরোপ করলেও পরে বহু ছাড় দিয়েছেন। জনগণের কাছ থেকে সত্য আড়াল করেছেন। সংবাদপত্রটি পর্যালোচনা করা নথির ভিত্তিতে জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষ করার জন্য নেতানিয়াহুর নির্ধারিত মৌলিক শর্তগুলো কার্যত হামাসের কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ নিশ্চিত করেছে। ইয়েদিওথ আহরোনোথ প্রশ্ন তুলেছে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করা হয়নি, গাজাকে সামরিকমুক্ত করা হয়নি। এলাকাও পরিষ্কার করা হয়নি। যা ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য ছিল। যদি এই শর্তগুলো অপরিহার্য ছিল, তবে কেন নেতানিয়াহু এত ছাড় দিলেন? প্রশ্ন রাখে পত্রিকাটি। তারা আরও যোগ করে, জনসাধারণের মূল বাকি প্রশ্নগুলোর সৎ উত্তর প্রাপ্য। পত্রিকাটি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, চুক্তিটি সফল বলে বিবেচিত হলেও এর ছাড়গুলো অত্যন্ত গভীর। যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর গাজা উপত্যকায় কিছুটা স্বস্তি আসে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনী লড়াই থামিয়ে আংশিকভাবে গাজা থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করেছে। হামাস ইসরায়েলিদের জিম্মায় থাকা সব জীবিত বন্দিকে মুক্তি দেয়। বিনিময়ে ইসরায়েল ২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। তবে, ইসরায়েলের এই গণহত্যার ফলে গাজায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ। দুই বছরের এই আগ্রাসনে প্রায় ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ১৩৪ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো উদ্ধার করা হলে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা বহু গুণ বেড়ে যেতে পারে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরেও এখনো ধ্বংসাবশেষ থেকে আরও লাশ উদ্ধার হওয়ায় নিহতের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।