বাজারে একটি তালার দাম ১৭৩ টাকা, কিন্তু সেটি কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৫৯০ টাকায়। ২৬০ টাকার বালতি কেনা হয়েছে ১ হাজার ৮৯০ টাকায়, ৬৫ টাকার বাঁশির জন্য দেওয়া হয়েছে ৪১৫ টাকা, আর ৯৮ টাকার ঝাড়ু কেনা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০ টাকায়। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কেনাকাটায় এমন ভয়াবহ দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ ঘটনায় গতকাল মামলা করেছে দুদক। মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৮ জনকে। এর মধ্যে পশ্চিম রেলের সাবেক দুই মহাব্যবস্থাপকও (জিএম) আছেন। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রাজশাহীতে মামলা দায়ের করেন। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে কেনাকাটায় মোট ২ কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ১৯৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিরা হলেন- অবসরে যাওয়া সাবেক মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম ও মজিবুর রহমান; সাবেক সিওসি খায়রুল আলম ও বেলাল হোসেন সরকার; সাবেক এসিওএস জাহিদ কাওছার; তৎকালীন ডেপুটি সিসিএম ফুয়াদ হোসেন আনন্দ; তৎকালীন ডিএফএ শ্যামলী রানী রায়; তৎকালীন উচ্চমান সহকারী আলামিন তালুকদার; সাবেক ডিএফএ (অর্থ) আলমগীর হোসেন; তৎকালীন সিওপিএস এ এম এম শাহনেওয়াজ; তৎকালীন এফএ অ্যান্ড সিএও শরিফুল ইসলাম; তৎকালীন ডেপুটি সিওপিএস হাসিনা খাতুন; সাবেক এফএ অ্যান্ড সিএও মসিহ উল হাসান; সাবেক এসিসিএম শেখ আবদুল জব্বার; সাবেক অতিরিক্ত এফএ অ্যান্ড সিএও গোলাম রব্বানী; তৎকালীন অতিরিক্ত এফএ অ্যান্ড সিও গোলাম রহমান; সাবেক এফএ অ্যান্ড সিও সরোজ কান্তি দেব এবং সাবেক সিসিএম মিহির কান্তি গুহ।
দুদক জানিয়েছে, এ কর্মকর্তারা বিভিন্ন পণ্য কেনার ক্ষেত্রে বাজার দরের চেয়ে ১৫ থেকে ৩৩ গুণ বেশি দাম দেখিয়েছেন। রেলের অভ্যন্তরীণ তদন্তেই এসব অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানে একটি তালা কিনতে ঠিকাদারকে পরিশোধ করা হয়েছে ৫ হাজার ৫৯০ টাকা, যেখানে ভ্যাট, আয়কর ও মুনাফাসহ বাস্তবিক মূল্য ছিল মাত্র ১৭৩ টাকা। শুধু তালা কেনাতেই দুর্নীতি হয়েছে ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৪০০ টাকার। অন্যদিকে, ২৬০ টাকার বালতি ১ হাজার ৮৯০ টাকায়, ৬৫ টাকার বাঁশি ৪১৫ টাকায় এবং ৯৮ টাকার ঝাড়ু ১ হাজার ৪৪০ টাকায় কিনে লুট করা হয়েছে ১৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা। একইভাবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে অফিসে ৫০টি ভিআইপি পর্দা কিনতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৩০০ টাকা। মোট ৪টি দরপত্র প্রক্রিয়ায় ১৭ ধরনের পণ্য কেনাকাটায় আত্মসাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ১৯৬ টাকা।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাক্কলন কমিটি বাজারদর যাচাই না করেই প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ১৫ থেকে ৩৩ গুণ পর্যন্ত বেশি দর নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করে। ১৬৬টি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৬টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয় এবং তারাই কার্যাদেশ পায়। মূল্যায়ন কমিটি বাজারদর যাচাই না করেই ইচ্ছাকৃতভাবে অধিক মূল্যের দর গ্রহণ করে।