ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৬টি সদস্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ইউক্রেনের জনগণের অবশ্যই নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের স্বাধীনতা থাকতে হবে এবং একটি কূটনৈতিক সমাধানে অবশ্যই ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয়দের স্বার্থের সুরক্ষা দিতে হবে। সোমবার রাতে গৃহীত ও গতকাল প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘অর্থবহ আলোচনা শুধু যুদ্ধবিরতি বা শত্রুতা হ্রাসের প্রেক্ষাপটেই সম্ভব।’ তারা আরও বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে একমত যে, কূটনৈতিক সমাধান অবশ্যই ইউক্রেন ও ইউরোপের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা করবে।’ রয়টার্স জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সব সদস্য দেশের নেতারা এই বিবৃতির বক্তব্য সমর্থন করলেও হাঙ্গেরি এতে সই করেনি। ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্য নিয়ে আগামী শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক করার কথা রয়েছে। যুদ্ধ বন্ধ করতে ইউক্রেন ও রাশিয়াকে ‘একে অপরের কাছে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, বৈঠকে পুতিনের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়েই কথা বলবেন। ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠককে সামনে রেখেই ওই বিবৃতিটি দিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। ইউরোপীয় দেশগুলো মনে করে, আলাস্কার বৈঠকে রাশিয়াকে বড় ধরনের ছাড় দিলে ভবিষ্যতে পশ্চিমা দেশগুলোকে নিরাপত্তা নিয়ে হুমকিতে পড়তে হতে পারে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের সবচেয়ে বড় ও প্রাণঘাতী সংঘাত। এই যুদ্ধে ধীরে ধীরে অগ্রগতি লাভ করতে থাকা রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড অধিকার করে আছে।
নতুন হামলার প্রস্তুতি : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধবিরতির জন্য নয় বরং ইউক্রেনে নতুন সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে। সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিওবার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা ও সামরিক কমান্ডারদের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, পুতিন বৈঠককে নিজের ‘ব্যক্তিগত বিজয়’ হিসেবে উপস্থাপন করবেন এবং এরপরও আগের মতো যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি যুদ্ধবিরতির কোনো প্রস্তুতি নিচ্ছেন না। যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য রাশিয়ার সেনারা কোনো নির্দেশ পায়নি। বরং তারা বাহিনী পুনর্বিন্যাস করছে, যা নতুন হামলারই ইঙ্গিত।
ইউক্রেনের দক্ষিণ ফ্রন্টের সামরিক মুখপাত্র ভ্লাদিস্লাভ ভলোশিন সোমবার রয়টার্সকে জানান, রাশিয়া জাপোরিজ্জিয়া অঞ্চলে কিছু সেনা ইউনিট সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যা নতুন আক্রমণের প্রস্তুতির অংশ হতে পারে। এর আগে সোমবার জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেছিলেন, রাশিয়াকে কোনো ছাড় দিলে তারা যুদ্ধ থামাবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছিলেন, খুনি ছাড় পেলে শান্ত হয় না। রাশিয়া হত্যাযজ্ঞ থামাতে অস্বীকার করছে। তাই তাদের কোনো পুরস্কার বা ছাড় দেওয়া যাবে না। -রয়টার্স ও আলজাজিরা
এই সতর্কবার্তা ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের প্রাক্কালে এলো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, যুদ্ধ শেষ করতে কিয়েভকে কিছু ভূমি ছাড় দিতে হবে। ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, বৈঠকের প্রথম দুই মিনিটেই তিনি বুঝে যাবেন আলোচনায় অগ্রগতি সম্ভব কি না। ভবিষ্যতে পুতিনের সঙ্গে জেলেনস্কিরও বৈঠক হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।