ইরান-ইসরায়েলের ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ থামলেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মানুষের ভাগ্য এখনো পরিবর্তন হয়নি। তবে সেই সম্ভাবনা নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। গাজায় নতুন যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতাকারীরা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের এক কর্মকর্তা। এদিকে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দাবি, চুক্তির ‘খুব কাছাকাছি’ রয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। এদিকে, বুধবার সকালে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৪৫ ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তাদের অনেকেই ত্রাণ সংগ্রহের অপেক্ষায় ছিলেন বলে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। অন্যদিকে মঙ্গলবার হামাসের দাবি করা বোমা হামলায় সাত ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। হামাস জানিয়েছে, গাজায় নতুন যুদ্ধবিরতি ও বন্দি ফেরতের বিষয়ে আলোচনা করতে তোড়জোড় করছেন মধ্যস্থতাকারীরা। তবে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। ইসরায়েল ও ইরানের ১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘গাজা নিয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে’। -এএফপি
ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এ (ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায়) আক্রমণের কারণেই গাজায় বড় অগ্রগতি হচ্ছে। আমি মনে করি আমরা শিগগিরই ভালো কিছু শুনতে পাব। তিনি জানান, তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং তিনি বলেছেন, ‘গাজায় সমঝোতা খুবই কাছাকাছি।’এর কিছুক্ষণ পরই হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতি নিয়ে জোরালো প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে এখনো নতুন কোনো প্রস্তাব আসেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি। ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা দেশটির সংবাদমাধ্যম হারেৎজকে জানিয়েছেন, আলোচনায় এখনো কোনো অগ্রগতি নেই এবং বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়ে গেছে। এর আগে, মে মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের সমর্থনে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তাতে হামাস গ্রহণযোগ্য নয়- এমন কিছু সংশোধনী দাবি করলে আলোচনা স্থবির হয়ে যায়। ইসরায়েল ১৮ মার্চ গাজায় আবারও সামরিক অভিযান শুরু করে। বর্তমানে সেখানে অন্তত ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মার্চের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তিন মাস পর এটি আংশিক শিথিল করা হয়। এরপর ইসরায়েলের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচটি) নামে নতুন ত্রাণ বিতরণ কাঠামো চালু হয়েছে। জিএইচটি দাবি করেছে, ২৬ মে থেকে এখন পর্যন্ত তারা ৪ কোটি ৪০ লাখের বেশি খাবারের প্যাকেজ বিতরণ করেছে। এমনকি, বুধবার তিনটি কেন্দ্রে ২৪ লাখের বেশি খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। নতুন এ ত্রাণ ব্যবস্থার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা। হামাসকে সহায়তা না দিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর এ বিষয়টিকে তারা মানবিক নীতিমালার পরিপন্থি বলে অভিহিত করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জিএইচটি কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ত্রাণ সংগ্রহের সময় ৫৪৯ জন নিহত এবং ৪ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।