আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণ দলের (এমএসএমটি) প্রতিবেদন অনুসারে উত্তর কোরিয়া গত এক বছরে লাখ লাখ অস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও হাজার হাজার সেনা পাঠিয়ে রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য শক্তিশালী সহায়তা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সহযোগিতা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে ব্যাপক সহায়তা করেছে।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণ দলটি ১১ সদস্যের একটি জোট, যা জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণ প্যানেল ভেঙে দেওয়ার পর গঠিত হয়। দলটি জানায়, ২০২৩ সাল জুড়ে উত্তর কোরিয়া ৯০ লাখ গোলাবারুদ, ১৪ হাজারের বেশি সেনা এবং বিপুল পরিমাণ ভারী অস্ত্র সরবরাহ করেছে রাশিয়াকে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এসব সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে রকেট লঞ্চার, সেলফ-প্রপেলড গান, সামরিক যান, এবং কমপক্ষে ১০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এত বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহায়তার বিপরীতে রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে বিমান প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক যুদ্ধব্যবস্থা, বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরিশোধিত তেল সরবরাহ করেছে। মস্কো পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য তথ্যও সরবরাহ করেছে বলে জানায় পর্যবেক্ষক দলটি। প্রতিবেদনে এ সহযোগিতাকে জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার সরাসরি লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, উভয় দেশের মধ্যে সামরিক বিনিময় অদূর ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
যৌথ বিবৃতিতে এমএসএমটির অন্তর্ভুক্ত ১১ দেশ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে অর্থবহ কূটনীতির পথে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে। উল্লেখ্য, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া গত বছর একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে যেখানে উভয় দেশ প্রতিশ্রুতি দেয় যে একে অন্যের বিরুদ্ধে হামলা হলে তারা তাৎক্ষণিক সামরিক সহায়তা দেবে। মার্কিন কর্মকর্তারা সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে অব্যাহত সহায়তার বিনিময়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উপগ্রহ ও মহাকাশ প্রযুক্তি ভাগ করে নিতে পারে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এপ্রিলে প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন, কুরস্ক অঞ্চলে উত্তর কোরিয়ার সেনারা যুদ্ধ করেছেন। যদিও জানুয়ারিতে তাদের ব্যাপক সংখ্যায় হতাহতের কারণে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। রাশিয়াকে উত্তর কোরিয়ার সামরিক সহায়তা ইউক্রেনের জন্য হুমকির এমন বাস্তবতায় এমএসএমটির এ প্রতিবেদন উত্তর কোরিয়া-রাশিয়া জোটের বৈশ্বিক প্রভাব এবং নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে। -সিএনএন