উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতে দু’দিন ধরে বিপদসীমার ওপর দিয়ে তিস্তা নদী পানি প্রবাহিত হয়েছে। এতে করে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছাউপজেলার নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরগুলো প্লাবিত হয়েছে। ফলে চরাঞ্চলের মৎস চাষীদেরপুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
তিস্তার নিম্নাঞ্চলে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতপানিতে ডুবে গেছে। রংপুরের তিন উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এদিকে তিস্তা নদী পানি বৃদ্ধিতে গঙ্গাচড়া সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার জায়গার ব্লক ধ্বসে গেছে। এতে করে ভাঙ্গনের হুমকিতে সেতু ও রংপুর-লালমনিরহাটের যোগাযোগের সড়ক।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায়তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়েপ্রবাহিত হয়েছে। তিস্তার ভাটিতে কাউনিয়াতেও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিকেল ৩টায় পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারীইউনিয়নের বন্যা কবলিত পশ্চিম ইচলী ও শংকরদহ গ্রাম এবং মর্ণেয়া ইউনিয়নের নীলারপাড় এলাকা পরিদর্শন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন গঙ্গাচড়া উপজেলানির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসজীবুল করিম, লহ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদীসহ অন্যরা। এর আগে ১৩ আগস্টও দিনভর তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তায় পানি বৃদ্ধির ফলে গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধের ৬০ মিটার ব্লক ধ্বসে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু রক্ষা বাঁধটি গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হলেও রক্ষণাবেক্ষনে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এ বছর তিস্তা নদীর পানি সরাসরি বাঁধের সেই দূর্বল জায়গায় আঘাত হানায় ব্লক ধ্বসে যাওয়া স্থানে প্রায় ৭০ ফুট গর্ত তৈরী হয়েছে।
গঙ্গাচড়া লহ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, পশ্চিম ইচলী, মধ্যইচলী, পূর্ব ইচলী, জয়রামওঝা, শংকরদহ, চর চল্লিশসালসহ ইউনিয়নে প্রায় ৫’শপরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেই সাথে তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শংকরদহ গ্রামের মানুষের আতংঙ্কিত রয়েছে।
গঙ্গাচড়া কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম জানান, আমার এলাকার বিনবিনা, শখের বাজার, খলাইর চর, মটুকপুর, আবুলিয়া, চিলাখাল এলাকায় প্রায়আড়াইশ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আমরা তাদের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছি।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, সাম্প্রতিকবন্যায় তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করছি। পানিবন্দী পরিবারের জন্য সাড়ে ৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর থাকতে পারে। এরপর দেশের উজানে ভারী বৃষ্টিপাত কমে গেলে তিস্তা নদীর পানি ধীরে ধীরে কমে যাবে।
বিডি প্রতিদিন/এএম