ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে এটি একটি ঐতিহাসিক বৈঠক।
তবে এর বাইরে আরও একটি কারণে ট্রাম্প-পুতিনের এই আলোচনা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হচ্ছে- এই আলোচনার সফলতার ওপরই নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের রফতানি শুল্কের ভাগ্য। আলোচনা ব্যর্থ হলে ওয়াশিংটন ভারতের ওপর দ্বিতীয় দফার শুল্ক আরও বৃদ্ধি করতে পারে বলে সতর্ক করেছে আমেরিকা।
মার্কিন ট্রেজারি মন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, এ বিষয়টি পুরোটাই নির্ভর করছে শুক্রবার আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের ওপর। ইতোমধ্যেই ভারতীয় পণ্যে দ্বিতীয় দফায় শুল্ক বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া থেকে তেল কেনার অভিযোগে এই শুল্কহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন যদি পুতিনের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হয় তাহলে ভারতীয় পণ্যে নিষেধাজ্ঞা অথবা দ্বিতীয় ধাপের শুল্কহার আরও বৃদ্ধি করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্কট বেসেন্ট।
বুধবার ব্লুমবার্গ টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মাসের শুরুতে ভারতীয় পণ্যে পূর্বঘোষিত ২৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে সমপরিমাণ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যা এ মাসের শেষে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। মূলত রাশিয়ার তেল এবং অস্ত্র আমদানি করায় নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত এসেছে।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতার ভূমিকায় আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বুধবার ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, যদি মস্কো যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয় তাহলে তাদের গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পুতিনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন ট্রাম্প। এর আগে ফোনকলে কথা বলেন এ দুই নেতা। এছাড়া ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ একাধিকবার রুশ কমকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যার ধারাবাহিকতায় শুক্রবার আলাস্কায় বৈঠকে হতে যাচ্ছে। কীভাবে এই যুদ্ধের অবসান হবে তা নিয়ে আলোচনা করবেন তারা।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাক্ষাৎ নিয়ে ইউরোপীয় নেতারা কিছুটা উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন বেসেন্ট। তিনি বলেন, দুই নেতার সাক্ষাৎ হচ্ছে, তবে তা কীভাবে হবে, কী করা উচিত তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ইউরোপীয় নেতারা। বেসেন্ট মনে করেন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে ইউরোপীয়দের যোগ দেওয়া উচিত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে মস্কোর কাছ থেকে কম মূল্যে তেল আমদানি শুরু করে দিল্লি। যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে টানাপড়েন স্পষ্ট হয়েছে। এছাড়া এই ইস্যু দুই দেশের বাণিজ্য আলোচনাও ব্যাহত করছে। ২০২১ সালে যেখানে রুশ তেল আমদানির পরিমাণ ছিল ৩ শতাংশ সেখানে ২০২৪ সালে আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশে। এর মাধ্যমে ভারত যে ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশটি যুক্তি দিয়েছে নিজেদের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যক্তাদের রক্ষা করতে রাশিয়ার কাছ থেকে স্বল্প মূল্যে তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এখন তেল আমদানির খরচ বৃদ্ধি পেলে তা সরসরি এসব ব্যাবসায়ীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/একেএ