গাজার উদ্দেশে মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়া জাহাজে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মাল্টার আন্তর্জাতিক জলসীমায় গতকাল এ হামলার ঘটনা ঘটে। মাল্টা সরকার এবং জাহাজে যারা ত্রাণ পাঠিয়েছেন তারা বলেছেন, বোমা হামলার শিকার জাহাজ থেকে নিরাপদে সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলিয়া কোয়ালিশন ড্রোন হামলার শিকার কনসিয়েন্স জাহাজের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে। এ ঘটনায় তারা ইসরায়েলের দিকে আঙ্গুল তুলেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, জাহাজে হামলার ঘটনায় অবশ্যই ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হবে এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জবাবদিহি চাওয়া হবে। এ ঘটনার জন্য ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। মাল্টা সরকার জানিয়েছে, মে দিবসে মেরিটাইম কর্তৃপক্ষ একটি ফোন পায়, যেখানে বলা হয় মধ্যরাতে একটি জাহাজে আগুন ধরেছে। জাহাজটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবস্থান করছে এবং এতে ১২ জন ক্রু ও চারজন বেসামরিক নাগরিক রয়েছে। ঘটনাস্থলের কাছে থাকা একটি টাগ বোট ত্রাণবাহী ওই জাহাজের আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে মাল্টার একটি টহলদারি জাহাজ পাঠানো হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর নিরাপদে জাহাজের ক্রুদের উদ্ধার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা ফ্রিজম ফ্লোটিলিয়া কোয়ালিশন জানিয়েছে, হামলার ফলে জাহাজটি ডুবে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে ৩০ জন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী ছিল। তারা মূলত গাজায় প্রবেশে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে। বৃহস্পতিবার দিনজুড়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৩১ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গতকাল ভোরেও ভূখণ্ডটির একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বোমার আঘাতে ছয়জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। এতে করে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫২ হাজার ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। খবর কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার।
এদিকে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে যে, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় কোনো ত্রাণ পৌঁছাতে পারছে না। গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য প্রস্তুত ৩ হাজার ট্রাক উপত্যকায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। -রয়টার্স
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাইকেল রায়ান এই পরিস্থিতিকে ‘একটি জঘন্য’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে, গাজায় শিশুরা অনাহারে রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের কাছে গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন যে ৯২ শতাংশ শিশু এবং গর্ভবতী নারী এখন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছেন।
গাজায় আলজাজিরার সংবাদদাতা ইসরায়েলের ৬০ দিনের অবরোধকে বেসামরিক জনগণকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে শ্বাসরোধ’ করা হিসাবে বর্ণনা করেছেন। পৃথক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা আনাদোলু বলছে, গাজা উপত্যকায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ হাজার ৪১৮ জনে পৌঁছেছে বলে বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণে আহত হওয়া আরও ৭৭ জনকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯১ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। -আলজাজিরা