পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দমনপীড়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মোর্শেদ আলম পান ২০২৪ সালে সেরা অফিসার পদক। এবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, জুলাই বিপ্লবের বিরোধী হিসেবে টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ২৬ লাখ টাকা আদায়ের। এ বিষয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরে আইজিপিস কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর বোন মোসা. নাসিমা আক্তার মুন্নি। অভিযোগ থেকে জানা গেছে, একটি হজ এজেন্সির মালিক আলহাজ মো. নজরুল ইসলাম খান ব্যবসার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বিভিন্ন লিল্লাহ বোর্ডিং, মাদরাসা ও এতিমখানার খাদেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এজন্য সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা ও সুসম্পর্ক থাকলেও কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি ছিল না বা তিনি কোনো দলের নেতা-কর্মী নন। সম্প্রতি তাঁর কাছে অজ্ঞাতনামা মোবাইল নম্বর থেকে একটি ফোন কল আসে। ফোনকারী ব্যক্তি তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চান। না দিলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় তাঁকে আসামি বানানো হবে বলে হুমকি দেন। তিনি কোনো ধরনের অন্যায়-অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থাকায় ওই হুমকিধমকিতে কর্ণপাত করেননি। কিন্তু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মোর্শেদ আলম ১১ জন পুলিশ সদস্যসহ যাত্রাবাড়ীর ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের শরীফপাড়ার খান মহলে নজরুল ইসলাম খানের বাড়িতে উপস্থিত হন। তিনি যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নজরুল ইসলামকে ওই মামলার ৫৭ নম্বর আসামি উল্লেখ করে তাঁকে থানায় নিয়ে যান। পরে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাঁর বোন নাসিমা আক্তার মুন্নিকে থানায় ডেকে আনান। থানায় গেলে মুন্নির কাছ থেকে নগদ ১ লাখ টাকা নেন এসআই মোর্শেদ আলম। তারপর গভীর রাত পর্যন্ত দেনদরবার চলে। কিন্তু ওই মামলা থেকে নজরুলের নাম কাটার জন্য ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। আলোচনার একপর্যায়ে আপসের জন্য এসআই মোর্শেদ যাত্রাবাড়ী থানায় জিহাদ হত্যা মামলার বাদী ও কথিত জিহাদের চাচা, থানার ওসি, ওয়ারী বিভাগের ডিসি ও মিডিয়া ম্যানেজ করতে ৪০ লাখ টাকার কম হবে না বলে জানান। এ সময় এ লেনদেন থানায় না করারও পরামর্শ দেন তিনি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিবিরবাগিচার ২ নম্বর গেটসংলগ্ন ৭৬/২/এম/৫ নম্বর বাড়ির নিচতলায় মামলার বাদী কর্তৃক ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে হলফনামা দিয়ে তাঁর নাম এজাহার থেকে কেটে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় একাধিক উপস্থিত ব্যক্তির সামনে এসআই মোর্শেদ আলমকে ব্যাংকের ডিপিএস ভেঙে ২৪ লাখসহ মোট ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেওয়ার পরও নজরুলকে না ছেড়ে এসআই মোর্শেদ অন্য এক মামলার আসামি দেখিয়ে ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে তাঁকে আদালতে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে নজরুল ইসলাম খান বিনা অপরাধে অসুস্থ অবস্থায় কারাভোগ করছেন। অন্যদিকে টাকা দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে না আনতে এসআই মোর্শেদের নেতৃত্বে চলমান মামলাবাণিজ্যের সংঘবদ্ধ চক্র তাঁর পরিবার ও লেনদেনে উপস্থিত ব্যক্তিদের নতুন মামলার আসামি বানিয়ে হয়রানি করার হুমকি দিচ্ছেন। ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা ন্যায় ও সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ ও আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত দিতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গতকাল অভিযোগ প্রসঙ্গে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মোর্শেদ আলমকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। তবে এ বিষয়ে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, ‘এসআই মোর্শেদ আলমের অভিযোগের একটি অনুলিপি আমরা পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’