চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষার প্রধান প্রজনন মৌসুমে পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ আহরণে সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ৪ অক্টোবর মধ্যরাত (১২টার পর) থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে ইলিশ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনার প্রায় ৬০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকা। অভয়াশ্রমকালে চাঁদপুর সদর, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ ও হাইমচর উপজেলা এলাকায় ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণে ৪৫ হাজার ৬১৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে সাগর থেকে ইলিশ মিঠা পানিতে ডিম ছাড়ার জন্য ছুটে আসে। এই সময়টাতে যাতে জেলেরা নদীতে নামতে না পারে, সেজন্য জেলে পাড়াগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, উপজেলার বাজারগুলো ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ব্যানার সাটানো হয়েছে। তবে আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ লাখ টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
জেলে খলিল শেখ ও শাহজাহান গাজী জানান, মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার জন্য সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দেয় তা আমরা মানি। কিন্তু জেলার বাইর থেকে অসাধু জেলেরা এসে এখান থেকে মা ইলিশ নিধন করে নিয়ে যায়। তাদের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও মৎস্য বিভাগের নেতারা অর্থের বিনিময়ে ইলিশ আহরণে সুযোগ করে দেয়। এসব বন্ধ করতে পারলে অভয়াশ্রমের উদ্যোগ সফল হবে। আর এই অভয়াশ্রমকালে বেকার জেলেরা তাদের সহায়তা বৃদ্ধির দাবি জানান।
নৌ-পুলিশ চাঁদপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা নদী বিশাল জলরাশি। বেশ কয়েকটি নদী এসে এখানে মিলিত হয়েছে। মা ইলিশের প্রজনন মৌসুমের এই সময়ে নৌ-পুলিশ যেমন কঠোর হবে, পাশাপাশি স্থানীয় সকল স্টেকহোল্ডারদের এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ও কিছু পুলিশের বিরুদ্ধে জেলেদের অভিযোগ এসেছে। এসব বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবু কাওসার দিদার বলেন, প্রজনন সময়ে সাগর থেকে ইলিশ চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা নদীতে চলে আসে। ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন জেলেরা যাতে ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকে। তাহলেই মা ইলিশের প্রজননের সুযোগ তৈরি হবে। এতে করে জাটকা ও ইলিশের উৎপাদন বাড়বে, সেই সাথে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। ডিম ছাড়ার জন্য এই সময়ে মিঠা পানিতে ছুটে আসে। যে কারণে সরকার ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে। মা ইলিশ রক্ষায় ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সসহ সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। অভয়াশ্রম চলাকালে প্রতিদিন-রাত পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন টিম নদীতে থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই