স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনা ও ভুল তথ্যের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এবং গলফ খেলেছেন। তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে লেবার ডে'র ছুটিতে অনেকেই যখন গ্রীষ্মের শেষ আমেজ উপভোগ করছিলেন, তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একদল ব্যবহারকারী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে ভয়ংকর জল্পনায় মাতেন। এক্স (সাবেক টুইটার) এবং টিকটকে #trumpisdead (ট্রাম্প মৃত) এবং #whereistrump (ট্রাম্প কোথায়) এর মতো হ্যাশট্যাগগুলো ট্রেন্ডিং হতে শুরু করে। লাখ লাখ মানুষ ট্রাম্পের মৃত্যু, স্ট্রোক বা অন্য কোনো গুরুতর স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থার কল্পকাহিনী তৈরি করে ভিডিও দেখেন ও শেয়ার করেন।
তবে বাস্তবতা হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জীবিত এবং সুস্থ আছেন। মঙ্গলবার তিনি হোয়াইট হাউসে সরাসরি বক্তব্য রাখেন। এমনকি যখন তার মৃত্যুর গুজব ভাইরাল হচ্ছিল, তখনও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তার গলফ খেলার ছবি প্রকাশ করেছে এবং তার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যাল'-এ তার পোস্টগুলো সক্রিয় ছিল। ফক্স নিউজের এক সাংবাদিক তাকে এই গুজব সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প বিষয়টিকে 'উন্মাদনা' বলে উড়িয়ে দেন।
গুজবের উৎস কী?
আল জাজিরার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ভুয়া খবরটি ডালপালা মেলেছে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো
ভাইস প্রেসিডেন্টের মন্তব্য: সম্প্রতি ইউএসএ টুডে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রয়োজনে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত কি না। উত্তরে তিনি ট্রাম্পের সুস্বাস্থ্য কামনা করলেও বলেন, যদি ঈশ্বরের ইচ্ছায় কোনো ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটে, তবে আমি প্রস্তুত। তার এই মন্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে অনেকেই প্রচার করতে শুরু করেন যে ট্রাম্পের গুরুতর কিছু ঘটেছে।
প্রকাশ্যে অনুপস্থিতি: গত ২৬ আগস্ট একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে উপস্থিতির পর ট্রাম্প প্রায় ছয় দিন প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। ক্যামেরার সামনে থাকতে অভ্যস্ত একজন প্রেসিডেন্টের এই অনুপস্থিতি অনেকের মনে সন্দেহের জন্ম দেয়।
স্বাস্থ্যগত ইতিহাস: ট্রাম্পের দীর্ঘস্থায়ী ভেনাস অপ্রতুলতা (chronic venous insufficiency) নামে একটি রোগ রয়েছে, যা প্রাণঘাতী না হলেও পায়ে ফোলাভাব সৃষ্টি করে। তার ফোলা গোড়ালি ও হাতে আঘাতের পুরনো ছবি ব্যবহার করে গুজব রটানো হয় যে তিনি গুরুতর অসুস্থ।
প্রভাবশালীদের ভূমিকা
বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শের বেশ কিছু সামাজিক মাধ্যম প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও এই বিতর্কে হাওয়া দেন। তারা ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং হোয়াইট হাউসের কাছে জবাবদিহি চেয়ে লক্ষ লক্ষ ভিউ পাওয়া ভিডিও তৈরি করেন। এমনকি হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত ট্রাম্পের জীবন সম্পর্কিত একটি ভিডিওকে অনেকে 'শোকবার্তা' হিসেবেও আখ্যায়িত করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বনেতাদের নিয়ে এমন মৃত্যুর গুজব নতুন কিছু নয়। সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিন থেকে শুরু করে ফিদেল কাস্ত্রো, কিম জং উন এবং ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়েও অতীতে এমন ভুয়া খবর ছড়িয়েছে। তাদের মতে, যখন কোনো নেতা গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার সীমিত করেন বা গোপনীয়তা বজায় রাখেন, তখন এই ধরনের গুজব বেশি ছড়ায়। এটি প্রায়শই রাজনৈতিক বিরোধীদের জন্য এক ধরনের মানসিক স্বস্তি হিসেবে কাজ করে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল