১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ, পদোন্নতি, বদলি- সবকিছু ছিল সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ার। অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট অধস্তন আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করবে- এটাই ছিল ১৯৭২-এর সংবিধানের বিধান।
এটার চতুর্থ সংশোধনী যদি আমরা বলি ‘বাকশাল সংশোধনী’ ১৯৭৫ সালে, সেখানে সুপ্রিম কোর্টের বদলে এর নিয়ন্ত্রণ একচ্ছত্রভাবে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়। অর্থাৎ অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত হলো। পরবর্তী সময়ে এই নিয়ন্ত্রণের যৌথ ব্যবস্থা করা হয়, অর্থাৎ বলা হয় যে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে অধস্তন আদালত নিয়ন্ত্রণ করবেন।
এখন অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ মানে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, বরখাস্ত- এসব প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে করবেন। এটা পঞ্চদশ সংশোধনীতেও বহাল রাখা হলো। কিন্তু এটা বলা বাহুল্য, যেহেতু রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ অনুযায়ী কাজ করেন, তার মানে নির্বাহী বিভাগের একটা কর্তৃত্ব থেকে গিয়েছিল।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আদালতের রায়ে ১৯৭২ সালের অবস্থায় ফেরত গেল। রায়ে বলা হলো যে, বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী বিভাগের কোনো ভূমিকা থাকার কথা নয়। এখন ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট একচ্ছত্রভাবে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি অবশ্যই বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য একটি মাইলফলক। ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার যে রায় হলো সেটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক রায়।
এই রায়ে বলা হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের জন্য। আমি আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার এই রায় বাস্তবায়ন করে দিয়ে যাবেন। অধস্তন আদালতের বিচারকদের সব সময় একটা ভয় থাকে, প্রচ্ছন্নভাবে হলেও একটা আশঙ্কা থাকে যে, আমার দেওয়া সিদ্ধান্ত বা রায় যদি সরকারের সম্পূর্ণ মনঃপুত না হয় তবে আমাকে হয়তো বদলি করে দেবে, আমার পদোন্নতিতে বাধা সৃষ্টি হবে।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি এখন যেহেতু সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের ওপর নির্ভর করবে, স্বাভাবিকভাবেই সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারকদের মূল্যায়ন করবেন না। অতএব, বিচারকরা আরো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন।
লেখক : সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ