আজ ১৪ এপ্রিল, বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ। কেবল বাংলাদেশে নয়, এই দিনে এশিয়ার আরও অনেক দেশ নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। সৌর ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ সময় বিভিন্ন সংস্কৃতিতে নতুন সূচনার প্রতীক হিসেবে উদ্যাপিত হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক, বাংলাদেশ ছাড়া আর কোন কোন দেশে ১৪ এপ্রিল বা এর কাছাকাছি সময়ে নববর্ষের উৎসব উদ্যাপিত হয়—
মিয়ানমার
মিয়ানমারে নববর্ষ ‘থিংইয়ান’ নামে পরিচিত, বার্মিজ ভাষায় যার অর্থ ‘পরিবর্তন’। সাধারণত মধ্য এপ্রিলে এই উৎসব হয়, যা বার্মিজ সৌর ও চন্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। থিংইয়ানের প্রধান আকর্ষণ হলো পানি উৎসব, যা বিশ্বের প্রাচীনতম পানি উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম।
তবে এই বছর ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে মিয়ানমারে নববর্ষ উদ্যাপন স্থগিত করা হয়েছে।
গত ২৮ মার্চ মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৫ হাজার ১২ জন আহত হয়েছেন এবং ২১০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।
থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডে নববর্ষের শুরুটা ‘সংক্রান’ উৎসবের মাধ্যমে হয়। সংস্কৃত শব্দ ‘সংক্রান্তি’ থেকে আগত এই উৎসব মূলত ১৩ এপ্রিল শুরু হয়ে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলে। ২০১৮ সাল থেকে থাই সরকার উৎসবের ব্যাপ্তি ১২ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে এবং এ সময় দেশটিতে সরকারি ছুটি থাকে।
থাইল্যান্ডের নববর্ষের প্রধান আকর্ষণও পানি উৎসব, যেখানে সব বয়সের মানুষ একে অপরের দিকে পানি ছুড়ে আনন্দ করেন।
শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কায় সিনহালা নববর্ষ ‘আলুথ আবুরুদ্ধা’ নামে পরিচিত। ১৪ এপ্রিল পালিত এই উৎসবে সরকারি ছুটি থাকে এবং এটি প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলে। সৌর পঞ্জিকা অনুসারে পালিত হলেও দিনটি নতুন চাঁদের হিসাবে নির্ধারিত হয়।
এই উৎসবে নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী পিঠা, মিষ্টি ও পায়েস তৈরি হয় এবং লোকজ খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়, যার মধ্যে গরুর দৌড় ও ডিম খেলা উল্লেখযোগ্য।
কম্বোডিয়া
কম্বোডিয়াতে ১৪ এপ্রিল খেমার নববর্ষ পালিত হয়, যার স্থানীয় নাম ‘চউল সানাম থামাই’। উৎসবের শুরু হয় বৌদ্ধমন্দিরে সকালবেলায় ধর্মীয় আচার পালনের মাধ্যমে। এরপর বৌদ্ধমন্দির চত্বরে ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের মাধ্যমে নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয়।
এই উৎসবে রশি টানাটানির মতো খেলায় নারী বনাম পুরুষের প্রতিযোগিতা হয়। এতে ছোট-বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই অংশ নেয়।
লাওস
লাওসেও সৌর পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখের প্রথম দিনটি উদ্যাপিত হয়। স্থানীয়ভাবে এর নাম ‘সংক্রান’ বা ‘পি-মেই’, যার অর্থ নতুন সংক্রান্তি বা নতুন বছর। উৎসবটি তিন দিন ধরে চলে।
নেপাল
১৪ এপ্রিল নেপালের আনুষ্ঠানিক বর্ষপঞ্জিকা বিক্রম সাম্বাত-এর প্রথম দিন। এই দিনটি সৌর পঞ্জিকার ভিত্তিতে নির্ধারিত হলেও সাধারণত ১৪ এপ্রিলেই পালিত হয়। এ দিনে সরকারি ছুটি থাকে।
দেশটিতে ‘বৈশাখ উৎসব’ নামে সর্বজনীন এক আয়োজন হয়, যেখানে সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি খেলাধুলা ও শুভেচ্ছা বিনিময় হয়।
এছাড়াও চন্দ্রবর্ষের প্রথম দিন 'সোনাম লহসার'-ও নেপালে পালিত হয় এবং সেই দিনটিও সরকারি ছুটি।
ভারত
ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বৈশাখ মাসের প্রথম দিন নববর্ষ হিসেবে উদ্যাপন করা হয়। হিন্দু সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, মণিপুর, ওডিশা, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু ও ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন নামে পালিত হয়। যেমন; পাঞ্জাবে বৈসাখী, কেরালায় ভিষু, আসামে বিহু, তামিলনাড়ুতে পুথান্দু, ওডিশায় পান সংক্রান্তি, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় পয়লা বৈশাখ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/আশিক