পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে তালেবানবিরোধী ড্রোন হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছে। শনিবার খাইবারপাখতুনখোয়া প্রদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তালেবানদের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর আগে শুক্রবার রাতে তালেবান সদস্যরা সাতজন সেনাকে হত্যা করেছিল। পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানায়, খাইবারপাখতুনখোয়া প্রদেশে তিনটি ড্রোন হামলা চালানো হয়, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি তালেবানের আস্তানা। তিনি আরো জানান, হামলায় নিহতদের মধ্যে দুজন নারী ও তিন শিশু রয়েছেন। হামলার পর স্থানীয় বাসিন্দারা নিহতদের মরদেহ সড়কে রেখে বিক্ষোভ দেখান। তারা দাবি করেছেন, নিহতরা নিরীহ বেসামরিক নাগরিক, যারা হামলার শিকার হয়েছেন।
এছাড়া, অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তদন্ত চলছে যাতে নিশ্চিত হওয়া যায়, হামলার সময় ওই এলাকায় তালেবান যোদ্ধারা ছিল কি না। তিনি আরো বলেন, এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়, হামলাকারী এলাকা বেসামরিক অঞ্চল ছিল, না সেখানে তালেবানরা আশ্রয় নিয়েছিল।
পাকিস্তানি তালেবান, যাদের তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বলা হয়, মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে 'বসন্ত অভিযান' শুরুর ঘোষণা দেয় এবং অতর্কিত হামলা, লক্ষ্যভিত্তিক হত্যাকাণ্ড, আত্মঘাতী হামলা ও হুমকি দেয়। এর পর থেকে টিটিপি খাইবারপাখতুনখোয়া প্রদেশে প্রায় ১০০টি হামলা চালিয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, খাইবারপাখতুনখোয়া প্রদেশে সশস্ত্র তালেবান সদস্যরা একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিল এবং সেখানে সেনাবাহিনীর সাত সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে। ঘণ্টাব্যাপী চলা বন্দুকযুদ্ধে সেনাবাহিনী সশস্ত্র হেলিকপ্টার মোতায়েন করে, যাতে আটজন তালেবান নিহত হয় এবং ছয়জন সেনা সদস্য আহত হয়।
এএফপির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে খাইবারপাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলায় ১৯০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও আছেন।
এছাড়া, বেলুচিস্তানের দক্ষিণে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মোটরসাইকেলে রাখা বোমার বিস্ফোরণে এক সেনা ও এক বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা মহসিন আলী জানিয়েছেন।
এই অঞ্চলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী পশ্চিমাঞ্চলে প্রতিদিন হামলার ঘটনা ঘটছে, যেখানে সেনাবাহিনী নিয়মিত 'সন্ত্রাসীদের' হত্যা করার দাবি করে। তবে এসব অভিযান সহিংসতা কমাতে সক্ষম হয়নি, বিশেষত ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তানে হামলার সংখ্যা বেড়ে গেছে। ইসলামাবাদ তালেবান সরকারকে অভিযুক্ত করছে যে তারা পাকিস্তানবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছে, যারা আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে।
তবে তালেবান সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, পাকিস্তান নিজেই তার ভূখণ্ডে 'সন্ত্রাসী' গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে, বিশেষত ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর আঞ্চলিক শাখা আইএস-খোরাসানকে।
২০২৩ সালে পাকিস্তানে প্রায় এক হাজার ৬০০ মানুষ হামলায় নিহত হয়েছে, যা এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বছর ছিল, এ তথ্য জানায় ইসলামাবাদভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ।
বিডি প্রতিদিন/মুসা