রাশিয়ান ফেডারেশন বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত রেডি-টু-ইট মাংস রপ্তানির অনুমতি চেয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড পশুচিকিৎসা সনদ (ভেটেরিনারি সার্টিফিকেট) অনুযায়ী মাংস রপ্তানির প্রস্তাবটি সম্প্রতি রাশিয়ার ‘রসেলখোজনাডজোর’ দ্য ফেডারেল সার্ভিস ফর ভেটেরিনারি অ্যান্ড ফাইটোস্যানিটারি সারভেইলেন্স বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে পর্যালোচনা করছে বলে জানা গেছে।
দেশীয় উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, তবে উচ্চমূল্যের চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে বাংলাদেশ নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও, বাজারে মাংসের দাম এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১৫ বছরে দেশে মাংস উৎপাদন সাতগুণ বেড়েছে। তবুও দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার প্রস্তাবটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রাশিয়ান রপ্তানিকারকদের আগ্রহ বৃদ্ধির ফলে দেশটির পশু স্বাস্থ্য বিভাগ বাংলাদেশের বাজার প্রবেশের জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালের নভেম্বরেও রাশিয়া এ ধরনের একটি প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে তখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
রাশিয়ার প্রস্তাব ও আশ্বাস : সর্বশেষ প্রস্তাবে, রসেলখোজনাডজোর রাশিয়ান দেশীয় ও বন্য প্রাণী থেকে সংগৃহীত মাংস ও মাংসজাত পণ্যের জন্য ব্যবহৃত স্ট্যান্ডার্ড পশুচিকিৎসা সার্টিফিকেট ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে। সংস্থাটি বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছে।
দেশীয় উৎপাদনকারীদের উদ্বেগ : তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘সরকার বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। বিদেশ থেকে মাংস আমদানির অনুমতি দিলে তা সরাসরি দেশীয় খামারিদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি অনেক খামার বন্ধও হয়ে যেতে পারে।’
এ ছাড়া মাংস আমদানির ক্ষেত্রে জৈব নিরাপত্তার ঝুঁকিও আছে, যেটি উপেক্ষা করা যাবে না। বর্তমান আমদানি নীতিমালায় মাংস আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকাভুক্ত। তবে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার অনুমোদনসাপেক্ষে ব্যবসায়ীরা বিশেষভাবে মাংস আমদানি করতে পারেন।
বাংলাদেশও মাংস রপ্তানি করে : এদিকে বাংলাদেশ নিজেও সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং মালদ্বীপসহ বেশ কয়েকটি দেশে মাংস রপ্তানি করে। দেশের প্রাণিসম্পদ রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াতে সরকার ‘রোগমুক্ত অঞ্চল’ গঠন প্রকল্প চালু করেছে, যার মাধ্যমে ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ এবং পেস্ট ডেস পেটিটস রুমিন্যান্টস (পিপিআর) নির্মূলের লক্ষ্যে কাজ চলছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান বা অনুমোদনের আগে গভীরভাবে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং দেশীয় শিল্পের স্থিতিশীলতা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। একদিকে যেমন মাংসের বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে এই আমদানির সম্ভাব্য সুফল থাকতে পারে, অন্যদিকে এতে স্থানীয় খামারিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
রাশিয়ার রেডি-টু-ইট মাংস রপ্তানির প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য নতুন একটি নীতি-পর্যায়ভিত্তিক সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জ এনে দিয়েছে। সরকার এই মুহূর্তে একদিকে ভোক্তার স্বার্থ এবং অন্যদিকে দেশীয় উৎপাদকদের টিকিয়ে রাখার কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষায় তৎপর। পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে দেশের মাংস বাজারের ভবিষ্যৎ গতি।