‘আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে যদি একজন শিক্ষার্থী দেশ, দশ এবং সমাজের উপকারে লাগে তবে সেটাই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্থকতা।’ এই মূল্যবান আদর্শ ছিল বাউবির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এম এ মান্নান স্যারের। সমকালীন বিশ্বে মুখোমুখি বা প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতার কারণে সবার জন্য শিক্ষা, জীবনব্যাপী শিক্ষা, অব্যাহত শিক্ষা প্রভৃতি ধারণা থেকে বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষা পদ্ধতির প্রচলন। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার চাপ তথা ভর্তি বা আসন সমস্যা সমাধানের জন্য বা চাহিদার প্রয়োজনে দূরশিক্ষা বা উন্মুক্ত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা অসম্ভব। ১৮৪০ সালে স্যার আইজাক পিটম্যান তার ছাত্রছাত্রীদের পোস্ট কার্ডের ওপর সংক্ষিপ্ত আকারে (শর্ট হ্যান্ড পদ্ধতিতে) প্রতিলিপিকৃত পাঠ্যগুলোকে মেইল করে ফিডব্যাকের মাধ্যমে তা আবার সংশোধন করে দিতেন। তার এ পদ্ধতি তখন ইংল্যান্ড ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। এ জন্য তাঁকে দূরশিক্ষণের পথপ্রদর্শক বলা হয়। বর্তমানে বিশ্বে আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ ৯৫টি দেশে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আছে। দেশের একমাত্র উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষা ব্যবস্থার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বাউবি। ১৯৯২ সালে পার্লামেন্টের ৩৮ নম্বর অধীনে ২১ অক্টোবর ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে গাজীপুরে ৩৫ একর জমিতে নির্মিত বাউবির দেশে-বিদেশে রয়েছে বহু শাখা। শিক্ষা পদ্ধতি ক্রেডিট, কোর্স এবং সেমিস্টার সিস্টেমের হলেও তুলনামূলক খরচ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কম। বাউবির প্রশাসনিক কার্যক্রম ১১টি বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র, ৮০টি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র, ১ হাজার ৫১৬টি স্টাডি সেন্টার, ৩২টি আনুষ্ঠানিক ও ১৯টি অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাক্রম চালু আছে। ৬ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ২৯ হাজার ৫০৭ জন টিউটর। এসএসসি থেকে পিএইচডি পর্যন্ত সব শিক্ষার ব্যবস্থা এখানে আছে। বাউবির পাঠ্যবইগুলো এমনভাবে রচিত, যা কয়েকবার পাঠ করলেই শিক্ষার্থীরা সহজে অনুধাবন করে পরীক্ষায় লিখতে পারেন। বাউবির মূল দর্শন হলো, সবার জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করা। আজ ৩০ বছর পেরিয়ে শিক্ষা প্রসারে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রবাসী কল্যাণেও এগিয়ে গেছে স্বপ্নের ঠিকানা বাউবি।
লেখক : শিক্ষক