প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব স্ট্রোক দিবস (World Stroke Day)। এবারের প্রতিপাদ্য— “Act FAST, Save Brain, Save Life”। জনসচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাথমিক প্রতিরোধ ও দ্রুত চিকিৎসার গুরুত্ব বোঝানোই এ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন জীবদ্দশায় স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে সময়মতো চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিলে জীবন রক্ষা এবং স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব।
স্ট্রোক কী?
স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলের হঠাৎ ব্যাঘাত। এটি মূলত দুই প্রকার—
১. ইস্কেমিক স্ট্রোক (Ischemic Stroke): মস্তিষ্কের কোনো ধমনী বন্ধ হয়ে গেলে রক্ত ও অক্সিজেনের ঘাটতিতে মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট হয়।
২. হেমোরেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic Stroke): মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হলে আশপাশের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্ট্রোকের কারণ
- দীর্ঘদিনের উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)
- ডায়াবেটিস মেলিটাস
- উচ্চ কোলেস্টেরল
- ধূমপান ও মদ্যপান
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ
- স্থূলতা ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
- পারিবারিক বা বংশগত ঝুঁকি
স্ট্রোকের লক্ষণ (FAST সূত্রে মনে রাখুন)
- F (Face): মুখ বেকে যাওয়া
- A (Arm): এক বা দুই হাত দুর্বল হয়ে যাওয়া
- S (Speech): কথা জড়ানো বা অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া
- T (Time): এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া জরুরি
এ ছাড়া হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, চোখে দেখা কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো, হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদিও স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
স্ট্রোক নির্ণয়ের জন্য সাধারণত CT Scan, MRI, Doppler Ultrasound ও Blood Test করা হয়। এসব পরীক্ষায় মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বা রক্তক্ষরণ আছে কি না তা জানা যায়।
চিকিৎসা পদ্ধতি
ইস্কেমিক স্ট্রোকে রক্ত জমাট ভাঙার ওষুধ (Thrombolytic therapy) ব্যবহার করা হয়, তবে এটি ৩–৪.৫ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তক্ষরণ বন্ধ ও মস্তিষ্কের চাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ বা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
প্যারালাইসিস পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা
স্ট্রোকের পর অনেক রোগীর শরীরের এক পাশ আংশিক বা সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত (Paralysis) হয়ে যায়। পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর।
প্রাথমিক পর্যায়ে:
- রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখা
- জয়েন্টের নড়াচড়া বজায় রাখা
- পেশির খিঁচুনি (Spasticity) প্রতিরোধ
পুনর্বাসন পর্যায়ে:
- ধীরে ধীরে বসা, দাঁড়ানো, হাঁটা, ভারসাম্য রক্ষা
- দৈনন্দিন কাজের অভ্যাসে ফেরা
এক্সারসাইজ ও থেরাপি:
- প্যাসিভ ও অ্যাকটিভ এক্সারসাইজ
- স্ট্রেচিং, ব্যালান্স ট্রেনিং, গেইট ট্রেনিং
- ইলেকট্রিক স্টিমুলেশন ও ফাংশনাল থেরাপি
সমন্বিত থেরাপি:
স্পিচ থেরাপি ও অকুপেশনাল থেরাপির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করলে কথা বলা ও হাতের সূক্ষ্ম কাজের দক্ষতা পুনরুদ্ধার সম্ভব।
উপসংহার
স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব সঠিক জীবনযাপন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ওষুধ সেবন এবং ধূমপান ত্যাগের মাধ্যমে। সময়মতো চিকিৎসা ও ধারাবাহিক ফিজিওথেরাপিই স্ট্রোক আক্রান্ত ব্যক্তিকে নতুন জীবনের দিকে ফিরিয়ে আনতে পারে।
লেখক: চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।
বিডি-প্রতিদিন/মাইনুল