ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না এবং সেখানে শান্তি ফিরবে কি না––এ নিয়ে এখনো রয়ে গেছে অনেক প্রশ্ন।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা মেনে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে হামাস, তবে কিছু বিষয়ে আলোচনা করতে চায় তারা।
ট্রাম্প হামাসের বিবৃতিকে ইতিবাচকভাবে নিলেও তাদের ‘আলোচনার’ দাবি নিয়ে এখনো কিছু বলেননি।
এদিকে, ট্রাম্পের পরিকল্পনার ‘প্রথম ধাপ’ অনুযায়ী গাজায় সামরিক অভিযান সীমিত করা হবে হবে বলে যদিও জানিয়েছে ইসরায়েল, তবে হামলা পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না এরকম কিছু বলেনি তারা।
ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানানোর পরও শনিবার ভোরে গাজায় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ দেখা গেছে। অন্তত তিনটি জায়গায় ইসরায়েলি হামলা হয়েছে বলে স্থানীয় আল-শিফা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকার হাসপাতালগুলো ৬৬ জনের মৃতদেহ এবং ২৬৫ জনকে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীরা পৌঁছাতে না পারায় এখনো অনেক ভুক্তভোগী ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে আছেন।
মন্ত্রণালয় অনাহার এবং অপুষ্টির কারণে দুই শিশুর মৃত্যুর তথ্যও রেকর্ড করেছে, যার ফলে অপুষ্টিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১৫৪ জন শিশু।
অনিশ্চয়তা ও অস্পষ্টতা
গত সোমবার হোয়াইট হাউস একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা এগিয়ে গেলে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিভিন্ন রেখা দেখানো হয়েছে। যদিও মানচিত্রটি কিছুটা আনুমানিক বলে মনে হচ্ছে।
যদি শান্তি পরিকল্পনা হোয়াইট হাউসের মানচিত্রে দেখানো সীমানা অনুসরণ করে, তাহলে সামরিক বাহিনীর প্রাথমিক প্রত্যাহারের পরও গাজার প্রায় ৫৫ শতাংশ ইসরায়েলি বাহিনীর দখলে থাকবে।
দ্বিতীয় প্রত্যাহারের পর গাজার প্রায় ৪০ শতাংশ দখল ইসরায়েলের হাতে থাকবে। আর প্রত্যাহারের চূড়ান্ত পর্যায়ে, যা একটি ‘নিরাপত্তা বাফার জোন’ তৈরি করবে, এরপরও গাজার প্রায় ১৫ শতাংশ দখল করে রাখবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) নিজস্ব মানচিত্রের সর্বশেষ সংস্করণে তারা ‘বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র’ বলে যে এলাকা দেখিয়েছে, তা গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
এদিকে, শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে হামাসের জবাবে যদিও কিছুটা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তবে পরিকল্পনার মূল কয়েকটি বিষয় নিয়ে হামাস তাদের অবস্থান না জানানোয় সংঘাতে এরপর কী হতে যাচ্ছে তা নিশ্চিত নয়।
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নিরসনে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা অলিভার ম্যাকটার্নান বিবিসিকে বলেন, হামাস এখন ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর দায়িত্ব চাপিয়েছে যে তারা শান্তি পরিকল্পনার কিছু দিক নিয়ে আরও আলোচনার জন্য হামাসের আহ্বান মেনে নেবে কি না।
তিনি বলেন, সহিংসতার জন্য কোন পক্ষকে দায়ী করা হচ্ছে তার দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে ট্রাম্প ইসরায়েলকে হত্যা বন্ধ করতে এবং গাজায় সাহায্য পাঠাতে বলার পাশাপাশি আরও আলোচনার অনুমতি দেওয়ার কথা বলবেন।
গাজায় বিবিসি নিউজের সংবাদদাতা রুশদি আবু আলৌফ বলছেন, গাজার মানুষ হতবাক এবং নাটকীয় ও দ্রুতগতির ঘটনাবলী বুঝতে তারা হিমশিম খাচ্ছে।
‘গাজার ভেতর থেকে আমি শত শত বার্তা পেয়েছি, যেখানে প্রশ্ন করা হচ্ছে-যুদ্ধ কি শেষ হয়ে গেছে? এটি কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব? সেসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে আমি হিমশিম খাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সাম্প্রতিক ঘটনাবলী যুদ্ধ থামাতে সফল হবে কি না তা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবে যা স্পষ্ট তা হলো, গাজা যুদ্ধ একটি নির্ণায়ক মুহূর্তে প্রবেশ করেছে।’
সূত্র : বিবিসি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত