স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়াতে ও সংকট এড়াতে পিঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন। গতকাল ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণসংক্রান্ত সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান। উপদেষ্টা বলেন, ‘চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে এবার পিঁয়াজ আমদানি করা হবে। শুধু ভারত থেকে নয়, ব্যবসায়ীরা যেখান থেকে আমদানি করতে চাইবেন সেখান থেকেই অনুমতি দেওয়া হবে। কারণ আমাদের মূল উদ্দেশ্য পিঁয়াজের দাম কমানো, সরবরাহ বাড়ানো। এজন্য যেখান থেকে দাম কম পাওয়া যাবে সেখান থেকেই পিঁয়াজ আমদানি করা হবে।’
প্রসঙ্গ মার্কিন শুল্ক : উপদেষ্টা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০ শতাংশ কমে ১৫ শতাংশ করার জন্য সরকারের সব মহল থেকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সে আলোচনা এখনো চলমান। চূড়ান্ত চুক্তির আগে সেটা হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, আশা করছি শুল্ক কমতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ যারা আরোপ করেছে (যুক্তরাষ্ট্র) তাদের ওপর বিষয়টি নির্ভর করে।
প্রসঙ্গ চার পাটপণ্য আমদানিতে নতুন বিধিনিষেধ ভারতের : বাংলাদেশের চিঠি : আবারও বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। এর আওতায় ভারতের ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশ থেকে চার ধরনের পাটপণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারবেন না। শুধু দেশটির মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানির সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন বলেন, ‘স্থলবন্দর দিয়ে পাটপণ্য রপ্তানিতে ভারতের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা রপ্তানিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। আমরা ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। যতটুকু সংবেদনশীলতার সঙ্গে অ্যাড্রেস করা দরকার, আমরা সেটা করছি।’
প্রসঙ্গ ২৫ বোয়িং ক্রয় : ব্রিফিংয়ের সময় বাণিজ্য সচিব মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশটি থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ওই দেশের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২৫টি বোয়িং কেনার জন্য অর্ডার করা হয়েছে। বোয়িংয়ের ব্যবসাটা কিন্তু সে দেশের সরকার করে না, বোয়িং কোম্পানিগুলো করে। আমরা ২৫টি বোয়িং কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছি। একইভাবে ভারত ও ভিয়েতনাম ১০০ ও ইন্দোনেশিয়া ৫০টি বোয়িং কিনছে। আগে আমাদের ১৪টি অর্ডার ছিল। এখন বাণিজ্য ঘাটতি আরও কমাতে এ অর্ডার বাড়ানো হয়েছে। এ বোয়িং কোম্পানির ক্যাপাসিটি অনুযায়ী এগুলো সরবরাহ করবে। সুতরাং এগুলো সরবরাহ করতে তারা অনেক সময় নেবে। এক-দুই বছর লাগবে।’
পাম অয়েলের দাম কমল ১৯ টাকা : এদিকে পাম অয়েলের দাম কমল প্রতি লিটারে ১৯ টাকা। এতে এখন থেকে প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি হবে ১৫০ টাকায়, যা আগে ছিল ১৬৯ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় স্থানীয় বাজারেও এ দাম সমন্বয় করা হয়। পাম অয়েলের নতুন দাম ঘোষণা করে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ভোজ্য তেলের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারের সরবরাহ ও চাহিদা পর্যবেক্ষণ করে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় কমিশনের সুপারিশে প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের দাম ১৬৯ থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভোক্তারা লিটারে ১৯ টাকা কমে পাম অয়েল কিনতে পারবেন। তবে সয়াবিন তেল আগের মতো লিটার ১৮৯ টাকা (বোতল) অপরিবর্তিত থাকবে।’
বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘দেশে ভোজ্য তেলের বাজারে ৬০ ভাগ দখল হচ্ছে পাম অয়েলের। আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম কমায় এ দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সয়াবিনের মূল্য অপরিবর্তিত থাকায় স্থানীয় বাজারে দাম আগের মতোই রয়েছে।’ এর আগে ১৫ এপ্রিল সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বাড়িয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা।