জুলাই সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত ও বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণের জন্য রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত এবং প্রত্যাশিত স্বাক্ষরিত সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা দরকার। সে লক্ষ্যে কমিশন এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আলোচনা করবে।’ আলী রীয়াজ বলেন, ‘আশা করা যায় এ প্রক্রিয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত দুই পর্বের আলোচনায় কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে তাৎপর্যসংখ্যক সুপারিশ বা সংস্কার ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য সম্ভব হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়া পাঠানো হবে।’ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু বিগত ১৫ বছরে আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ রয়েছে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের আশু বাস্তবায়নযোগ্য বিষয়ে সরকারের কাছে অবহিত করা হয়েছে, বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিছু কিছু বিষয়ে নির্বাচন কমিশনও কাজ করছে। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আশা করি।’ নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে যেসব সিদ্ধান্তে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী? টিআইবির এ-সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘টিআইবির বিষয়ে আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারব না। তবে এ প্রক্রিয়া সামনে রেখে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে চেয়েছি। বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের নয়। তার পরও আমরা আরও আলোচনা করতে চাই।’ কমিশনের পরিচালন ব্যয় সম্পর্কে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা নিজস্ব কোনো ব্যয় করি না। এটি দেখার দায়িত্ব আইন মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের। সরকারের পক্ষে নিশ্চয়ই অডিট হবে।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের একটা বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে সংবিধান সংস্কার কমিশন থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় সংসদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে বিরোধীদলীয় প্রতিনিধির সভাপতিত্বের কারণে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার ওপর এক ধরনের চেক অ্যান্ড ব্যালান্স নিশ্চিত করা যাবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমিত করার বিষয়েও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অধিকাংশ রাজনৈতিক দল প্রধানমন্ত্রীর পদের পাশাপাশি দলীয় প্রধান থাকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ রোধ করা যাবে।’ সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে ঐকমত্য কমিশন ‘সফল’ কি না এবং মেয়াদ বাড়ছে কি না-বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, ‘সাফল্য বিষয়টা সব সময় পারসপেকটিভের ওপর নির্ভর করে। আমাদের দিক থেকে যে লক্ষ্য অর্জন করতে চেয়েছি, সেটা সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা। আমরা সে অর্থে জুলাইয়ের মধ্যে করতে চেয়েছিলাম। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে উপনীত হতে পেরেছি, প্রথমে ৬২টিতে ঐকমত্য হয়ে। পরে ১৯টির মধ্যে ১০টিতে পুরোপুরি একমত হয়েছে। এ জায়গা থেকে বিবেচনা করলে দেশের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এটা একটা বড় রকমের অর্জন। সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ। তারা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কমিশন সহযোগিতা করেছে। কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে শেষ পর্যন্ত একটা জায়গায় আসতে পারে।’ দলগুলোর ভিন্নতা থাকলেও সমঝোতা আসবে বলে আশা করেন তিনি। আলী রীয়াজ বলেন, ‘দলগুলো আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের লক্ষ্য, আশা করি সনদ স্বাক্ষরিত হবে।’