যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত নতুন রপ্তানি শুল্ক ২০ শতাংশ আজ থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। হোয়াইট হাউসের জারি করা নির্বাহী আদেশ আজ ১২টা ১ মিনিট থেকে কার্যকর হবে। তবে এ শুল্কহার নিয়ে এখনো দরকষাকষির সময় আছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআরের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল দফায় দফায় বৈঠক করে এ শুল্কহার ৩৫ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এ ছাড়া দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ২৫টি বোয়িং ও ৭ লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর বাইরে ইউএসটিআরের সঙ্গে আরও কিছু নন-ডিসক্লোজার চুক্তি করা হয়েছে। তবে সেসব চুক্তির বিষয়ে সরকার কিংবা ইউএসটিআর কারও পক্ষ থেকেই এখনো বিস্তারিত জানানো হয়নি।
নতুন আদেশ অনুযায়ী, শুল্কহার ১০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত হবে। এর আগে ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পরে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সময় শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগ দেয় ওয়াশিংটন। উভয় দেশের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তা ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দরকষাকষির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া পাল্টা শুল্ক ৩৫ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। তবে এ শুল্ক নিয়ে এখনো চুক্তি সই হয়নি। চুক্তি সই হওয়ার আগে শুল্ক নিয়ে আরও দরকষাকষির সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক নির্ধারণ করেছে সেটা স্বস্তিদায়ক কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আর একটু কমলে ভালো হতো। তারা যেটা করেছে মোটামুটি, তবে স্বস্তির জায়গা বলব না। আমরা তো চাই এটা (পাল্টা শুল্ক) না হলে ভালো হতো।
এমনিতেই বিশ্ব অনেক চ্যালেঞ্জে। আর যদি অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করা হয় তবে বাংলাদেশ খুব খারাপ পজিশনে নেই। আমাদের সুযোগ হলো আরএমজি অনেক ভালো। আমাদের টেক্সটাইল, আমাদের নিট যেটা সেটা কিন্তু তারা অনেক তাড়াতাড়ি অ্যাডজাস্ট করতে পারবে। ওয়েভিং একটু ডিফিকাল্ট হতে পারে।’ আপনারা কি আবার দরকষাকষিতে যাবেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। বাণিজ্য উপদেষ্টা এখনো আসেননি। আমি ইউএস চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের বাংলাদেশের বিষয়ে মনোভাব খুবই ভালো। বলেন-তুমি শেভরনের টাকা ফেরত দিয়েছো, মেটলাইফের টাকা দিয়ে দিয়েছো। বলেন-তোমরা তো টাকা আটকে রাখো না। ব্যবসায়ীদের ও বাংলাদেশের ওপর ভালো মনোভাব আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তি এখনো সই হয়নি। একটা ফরমাল চুক্তি সই হবে। এখানে আমরা দেখব কোন কোন জায়গায় আমাদের ডিউটি (শুল্ক) কমাতে হবে। কী কী আমদানি করতে হবে।’ শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির ‘নন-ডিসক্লোজার’ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যখন ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশন হয়, অনেক কথা বলা হয় না। এটা মাল্টিলেটার নেগোসিয়েশন না, এটা ডব্লিউটিও না, এটা ইউএন না, যে সবাই জানবেন। ওখানে ভিয়েতনাম আমার প্রতিদ্বন্দ্বী, আবার চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান সবাই আছে। কতগুলো জিনিস আছে বলা যায় না।’