ভারতে ২৪২ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেলের একটি বিমান। গতকাল গুজরাটের আহমদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি একটি ছাত্রাবাসের ওপর আছড়ে পড়ে। দুর্ঘটনায় বিমানের সব আরোহী মারা যাওয়ার তথ্য জানায় দেশটির পুলিশ। এ ছাড়া গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ছাত্রাবাসের অন্তত ৫০ ছাত্রের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি দাবি করেছে, অলৌকিকভাবে বিমানটির এক যাত্রী বেঁচে গেছেন। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় শোক জানিয়েছে পুরো বিশ্ব। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্যানুসারে, গতকাল বেলা ১টা ৩৮ মিনিটে লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশে আহমদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেটি থেকে সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় উড়োজাহাজটি ৬২৫ ফুট ওপরে উঠেছিল। আহমদাবাদ বিমানবন্দরের কাছে একটি আবাসিক এলাকায় মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর আছড়ে পড়ে। ফ্লাইটটি পরিচালনাকারী বিমান পরিবহন সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া বিবৃতিতে জানিয়েছে, আহমদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকগামী ফ্লাইট এআই১৭১ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। উড়োজাহাজে ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে দুজন পাইলট ও ১০ জন কেবিন ক্রু। আর যাত্রীর মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, একজন কানাডীয় এবং সাতজন পর্তুগালের নাগরিক। এ আরোহীদের কেউ বেঁচে নেই বলে ভারতীয় পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। দুর্ঘটনাস্থলের ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে এলাকাটি ঘন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। জরুরি সেবা সংস্থাগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং দুই ডজনের বেশি অ্যাম্বুলেন্স সেখানে মোতায়েন করা হয়। বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের কিছু অংশ আহমদাবাদের বি জে মেডিকেল হোস্টেলের ভবন ভেদ করে ভিতরে এবং কিছু অংশ বাইরে ঝুলে থাকতে দেখা গেছে। ওই সময় বি জে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যান্টিনে মধ্যাহ্নভোজ করছিলেন। দুর্ঘটনার পর তোলা ছবিতে হোস্টেলের ক্যান্টিনে টেবিলের ওপর খাবারের থালা ও গ্লাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় অন্তত পাঁচ মেডিকেল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এক কর্মকর্তা জানান, আহমদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশে ১টা ৩৮ মিনিটে উড্ডয়ন করে উড়োজাহাজটি। উড্ডয়নের ৫ মিনিট পরই মেঘানি নগরের একটি আবাসিক এলাকায় চিকিৎসকদের হোস্টেল ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজের প্রধান পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবহারওয়াল ও সহকারী পাইলট ক্লাইভ কুন্ডার। প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড্ডয়নের পরপরই বিমানে বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়, যে কারণে দ্রুত নিচে নামতে গিয়ে উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ফ্লাইট সেফটি বিশেষজ্ঞ মার্কো চ্যান জানিয়েছেন, উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় আবহাওয়া স্থিতিশীল ও আকাশ পরিষ্কার ছিল।
বিমান দুর্ঘটনাকে ‘অত্যন্ত মর্মান্তিক’ আখ্যা দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ‘উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের জন্য আমাদের আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি। যারা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমরা আমাদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
এদিকে বিমান দুর্ঘটনার খবরে শোক জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। গতকাল এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।