দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচনি হলফনামায় অসত্য তথ্য দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে দুদক থেকে একটি চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া তার হলফনামায় দাখিল করা সম্পদ বিবরণী ও তার আয়কর বিবরণী সম্পদের হিসাব করে অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আলাদাভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেবে দুদক। গতকাল বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। দুদক চেয়ারম্যান জানান, শেখ হাসিনার নামে প্রায় ২২ একর জমি ও একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির তথ্য গোপন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুদক যাচাই করে দেখেছে, শেখ হাসিনার নামে ২৮ দশমিক ৪১১ একর কৃষিজমি রয়েছে। যার মধ্যে কেনা জমির মোট দাম ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০ টাকা। এ হিসাবে তিনি ২১ দশমিক ৯১ একর জমির তথ্য গোপন করেছেন এবং ক্রয়মূল্যও প্রকৃত দামের চেয়ে ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০ টাকা কম দেখিয়েছেন, যা হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়ার শামিল।
ইসিতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি দমন কমিশনে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। ওই সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে তার দাখিল করা হলফনামা পর্যালোচনা করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায় শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে হলফনামার মাধ্যমে দাখিল করা পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণীতে তার নিজ নামে অর্জিত কৃষিজমির পরিমাণ ৬ দশমিক ৫০ একর উল্লেখ করেছেন। তার কেনা জমির আর্থিক মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু সমসাময়িক সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী শেখ হাসিনার নিজ নামে অর্জিত ২৮ দশমিক ৪১১ একর জমির তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে তার কেনা জমির মূল্য ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০ টাকা। এ তথ্য অনুযায়ী তিনি হলফনামায় ২১ দশমিক ৯১ একর জমির তথ্য গোপন করেছেন। কেনা জমির মূল্য ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০ টাকা কম দেখানোর মাধ্যমে হলফনামায় অসত্য তথ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি (শেখ হাসিনা) মাগুরা-১ আসনের তৎকালীন এমপি প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের শুল্কমুক্ত কোটা ব্যবহার করে বেনামে ২ লাখ ৩০ হাজার ইউরো মূল্যে (গাড়ি আমদানির এলসির বিপরীতে ব্যাংক থেকে পরিশোধিত মোট ১ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা) একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি আমদানি করে নিজ আবাসিক ঠিকানা সুধা সদন, বাড়ি নম্বর-৫৪, রোড নম্বর-৫, ধানমন্ডি, আবাসিক এলাকা, ঢাকার ঠিকানা ব্যবহার করে গাড়িটি রেজিস্ট্রেশন (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৬৩৬৪) করেন এবং নিজে তা ব্যবহার করেছেন। প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের আয়কর নথিতে কিংবা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা তার হলফনামায় আলোচ্য গাড়িটির বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি এবং তিনি কখনো তা ব্যবহারও করেননি বলে জানা যায়।