প্রতি ঈদে নিজ হাতে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন পোশাক কিনে আনতেন রুবেল। ঈদের দিন নামাজ শেষে পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতেন। প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে যেতেন। কিন্তু এবার রুবেলের পরিবারে ভিন্ন চিত্র। সবাই আছে, নেই শুধু রুবেল। রুবেলের অনুপস্থিতি পরিবারের সবার মনেই বোবা কান্নার ঢেউ।
২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ৪ আগস্ট পুলিশের গুলিতে কিশোরগঞ্জ শহরে শহীদ হন মো. রুবেল (৩৫)। জেলার তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা গ্রামের আজহারুল ইসলামের ছেলে রুবেল। থাকতেন কিশোরগঞ্জ শহরের নীলগঞ্জ মোড়ের সেবাশ্রম সংলগ্ন ভাড়া বাসায়। বাবা, মা এবং তিন ভাই ও দুই বোন মিলে যৌথ পরিবার তাদের। রুবেলের স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে। স্ত্রী গৃহিণী। বড় মেয়ে মাদরাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে, মেজো মেয়ে হেফজ শাখায় পড়াশোনা করে। ছেলে মোহাম্মদের বয়স চার বছর।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি মোড়ে পিতার সঙ্গে পারিবারিক ব্যবসা দেখভাল করতেন রুবেল। পার্টনারশিপে পুরাতন মোটরসাইকেলের ব্যবসা তাদের। ৪ আগস্ট প্রতিদিনের মতো দোকানেই ছিলেন তিনি। তখন পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষ চলছিল। চোখের সামনেই অনেককে আহত হয়ে ঢলে পড়তে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেননি তিনি। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে আহত একজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে হৃদরোগে (হার্টঅ্যাটাক) আক্রান্ত হন রুবেল। তাকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তারও মৃত্যু হয়। রুবেলের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম তোফায়েল জানান, রুবেল নিয়মিত তাবলিগ জামাতে অংশ নিতেন। তাবলিগ জামাতের মুরব্বিরা তাঁর নাম দেন আবদুল্লাহ। রুবেল ও আবদুল্লাহ দুই নামেই পরিচিত ছিলেন। তিনি জানান, তার মৃত্যুর পর জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে তাঁর পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। টানাপোড়েনের সংসার তাঁদের। ব্যবসা থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলে। রুবেল না থাকায় পুরো চাপ পড়েছে অন্য ভাইদের ওপর। তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন রুবেলের স্ত্রী ও সন্তানদের সব চাহিদা পূরণ করতে। সন্তানরা ছোট হওয়ায় পিতার কথা মনে হলেই কান্নাকাটি করে। তা দেখে তাঁরা নিজেরাও অশ্রু সংবরণ করতে পারেন না। রুবেল যেভাবে ঈদে স্ত্রী ও সন্তানদের নতুন পোশাক কিনে দিতেন, খাবার কিনে আনতেন, এখন তাঁরাও সেভাবেই ব্যবস্থা করেছেন। চার বছরের ছোট ছেলে মোহাম্মদ সবসময় পিতার মুখটি খুঁজেফিরে। ঘরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গিয়েও পিতাকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার কান্না সহজে কেউ থামাতে পারে না। পিতাবিহীন এবারের ঈদ নিরানন্দভাবেই কাটবে তাদের।