হামজা দেওয়ান চৌধুরীর এক পাগল নারী সমর্থক গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন। ‘হামজা, লুক অ্যাট মি, প্লিজ’ (হামজা, আমার দিকে তাকাও দয়া করে)। হামজাদের গাড়ি চলতে শুরু করায় সেই নারীও ছুটতে শুরু করলেন। সঙ্গে আরও একদল ভারতীয় সমর্থক। শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে সবাইকে ভক্ত বানিয়েই মাঠ ছাড়লেন হামজা। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ম্যাচেই নিজের জাত চেনালেন তিনি।
হামজা খেললেন লাল-সবুজের জার্সিতে। স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় তিনিই হয়ে উঠলেন নায়ক। বলের গতিপথ বদলে দিয়েছেন বার বার। সুন্দর ট্যাকলে কেড়ে নিয়েছেন বল।
ব্লক করেছেন বেশ কয়েকবার। মিডফিল্ডে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। নিখুঁত পাসে বল সাপ্লাই দিয়েছেন সতীর্থদের। ভারতীয়দের আক্রমণগুলো বার বারই তার পায়ের সামনে এসে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে। হঠাৎ করে পুরোপুরি নতুন একটা পরিবেশে অপরিচিত সতীর্থদের নিয়ে খেলেও মন জয় করেছেন হামজা। জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ভারতীয় সমর্থকরা সমুদ্রের গর্জন তুললেন। গোল চান তারা। সেই গোলের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন হামজারা। ম্যাচ শেষে বাড়ি ফেরার পথে নিজ দলের সমালোচনার চেয়েও ভারতীয়দের মুখে থাকল হামজাবন্দনা। কী করেছেন হামজা? প্রথমার্ধে মিডফিল্ডে খেলে গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। সেসব সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন মজিবর-হৃদয়রা। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই হামজার লম্বা পাসে বল ক্লিয়ার করতে পারেননি ভারতীয় গোলরক্ষক বিশাল। বল পেয়ে যান মজিবর। গোলপোস্ট ফাঁকা পেয়েও গোল করতে পারলেন না তিনি। এরপর গোলপোস্ট ফাঁকা পেয়ে গোল করতে পারেননি হৃদয়ও। ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দেন ফাহিমরাও।
বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল লড়াইয়ের উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছিল হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের হওয়ার পর থেকেই। বাংলাদেশে খবর রটে, হামজার ভয়ে সুনীলকে দলে নিয়েছে ভারত। ভারতীয় মিডিয়া পাল্টা লিখে তুলে ধরল অতীত পরিসংখ্যান। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে ভারত। জয়ের সংখ্যাতেও। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত ফুটবলীয় লড়াইয়ে গত এক যুগের ইতিহাস গতকালও খুব একটা বদলাল না। ২০১৯ সালে ভারতের মাঠে খেলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। এরপর গতকাল ফের ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমে ড্র করল বাংলাদেশ। তবে এই ড্রয়ের মধ্যে থাকল অনেক আফসোস। এত গোলের সুযোগ পেয়েও কী করে একটা দল জয় বঞ্চিত হয়! এই বিস্ময় ভারতীয় কোচের কণ্ঠেও। দেশটির স্প্যানিশ কোচ মানোলো মারকুয়েজ সোজাসাপ্টা বলে দিলেন, ‘আমরা খুবই লাকি যে পরাজিত হইনি।’ আর বাংলাদেশের কোচ কাবরেরা বললেন, ‘এত গোলের সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারলাম না। আমাদের সত্যিকারের স্ট্রাইকার প্রয়োজন।’ হামজায় বদলে গেছে বাংলাদেশের খেলা। ভারতীয় এক সাংবাদিক ম্যাচের পর মিডিয়া ট্রিবিউন ছাড়তে ছাড়তে বললেন, তোমরা দারুণ খেলেছো। বাংলাদেশের খেলায় উন্নতি হয়েছে। এতে সন্দেহ নেই। তবে এতটুকু উন্নতিতেই কি আমরা এশিয়ান কাপ খেলার স্বপ্ন দেখতে পারি? কাবরেরা তো সেই স্বপ্নই দেখালেন।