চার দিনের সরকারি সফরে আগামীকাল চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর।
ড. ইউনূসের চীন সফর ঘিরে শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ঢাকা-বেইজিং। সফরে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ কীভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবে ড. ইউনূসের এ সফরে কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ২৬ মার্চ চীন যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। সফরকালে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছাড়াও বিনিয়োগ, স্বাস্থ্যসেবা, পানি ব্যবস্থাপনা, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু কোনো চুক্তি সই হচ্ছে না। তবে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ড. ইউনূসের চীন সফরে অর্থনৈতিক সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা চালাবে ঢাকা। পাশাপাশি বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রচেষ্টাও প্রাধান্য পাবে এ সফরে। সফরকালে ঢাকা-বেইজিংয়ের মাঝে ৮টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে।
এর মধ্যে রয়েছে- মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সহায়তা, ষষ্ঠ চীন-মৈত্রী সেতুর সংস্কার, বাংলাদেশ হাইওয়ে নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন (সড়কসংক্রান্ত দুটি সমঝোতা), খেলাধুলা, প্রতি বছর দুই দেশের নির্বাচিত ৫০টি করে বই বাংলা-চাইনিজ ভাষায় অনুবাদ ও দুর্যোগ সহযোগিতাবিষয়ক প্রকল্পসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক। তবে চীনের পক্ষ থেকে বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে (জিডিআই) যুক্ত হওয়ার প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও এখনই এই সমঝোতা স্বাক্ষর করতে চায় না ঢাকা। গত রবিবার প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর সফল ও ফলপ্রসূ হবে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। আমরা এখনো আলোচনা করছি। অপেক্ষা করুন এবং দেখুন। আমরা এখনো বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। দুই দেশ কীভাবে পারস্পরিক লাভবান হতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এ ছাড়া সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটা বৈশ্বিক ম্যানুফেকচারিং হাব (উৎপাদন কেন্দ্র) হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। সে লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার সফরে চীনের কারখানাগুলোকে কীভাবে বাংলাদেশে স্থানান্তর করা যায়, সে বিষয়টি আলোচনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চার দিনের সফরকালে ২৭ মার্চ হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দেবেন ড. ইউনূস। সম্মেলনের উদ্বোধনী প্লেনারি সেশনে বক্তব্য দেবেন তিনি। একই দিনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার দিং ঝুঝিয়াংয়ের বৈঠক করবেন। ২৮ মার্চ বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’-এ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস। একই দিনে হুয়াওয়ে কোম্পানির উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন এন্টারপ্রাইজ পরিদর্শন করবেন তিনি। ২৯ মার্চ চীনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় পিকিং ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করবেন ড. ইউনূস। পরে বেইজিং থেকে চীনের একটি বিমানে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।