নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে (চনপাড়া বস্তি) আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গোলাগুলিতে তিনজন বিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাতের এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত হাসিব (৪০) এলাকার মৃত আয়নাল হোসেনের ছেলে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রূপগঞ্জ উপজেলার যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শামীমের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের রাব্বানী ও করিমের চনপাড়ার মাদক ও অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। রাব্বানী ও করিম আগে যুবদলের সঙ্গে ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে শামীমের সঙ্গে বিরোধের জেরে তারা যুবদল ছেড়ে স্বেচ্ছাসেবক দলে যোগ দেয়। এদিকে রাব্বানী, করিম ও রবিন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এলাকায় মাদক বাণিজ্য চালাত। মঙ্গলবার রাতে চনপাড়ার অপরাধ সাম্রাজ্যের আধিপত্য নিয়ে যুবদল নেতা শামীম এবং তার লোকজনের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রাব্বানী, রফিক ও শাকিলের লোকজনের বৈঠক হয়। এ বৈঠক চলাকালে শামীম ও রাব্বানীর পক্ষের লোকজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষ ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাতভর সংঘর্ষে দারোয়ার বাবুর ভাই হাসিবসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়। হাসিবকে আহত অবস্থায় প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠায়। পরে সেখানে নেওয়ার পথেই হাসিবের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া সংঘর্ষে উভয়পক্ষের বিজয়, রানা, বিল্লালসহ অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে হাসিবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে চনপাড়ায় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ সময় আপন এবং বশিরের ঘরসহ শতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর লুটপাট হয়েছে। দুর্বৃত্তরা লুটে নিয়েছে নারীদের কানের দুল ও গলার চেইন। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকার অনেক সাধারণ মানুষ বাড়িঘর ছেড়েছে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে যৌথ বাহিনী চনপাড়ায় দিনব্যাপী অভিযান চালিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র সাধারণ মানুষের কাছে ‘চনপাড়া বস্তি’ নামে পরিচিত। এটি অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য। এখানে মাদক, অস্ত্র, নারী ব্যবসা থেকে শুরু করে ভাড়াটে খুনি সবকিছুই চনপাড়াতে পাওয়া যায়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চনপাড়ার নিয়ন্ত্রণ ইউপি সদস্য বিউটি আক্তার কুট্টির হাতে। পরে বিউটি আক্তার কুট্টি খুন হলে চনপাড়া নিয়ন্ত্রণ করেন বজলুর রহমান বজলু। পরে বজলু পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জেলখানায় তার মৃত্যু হয়। তখন চনপাড়ার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আরেক ইউপি সদস্য শমসেরের হাতে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর চনপাড়ার অপরাধ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম, রাব্বানী ও করিম গ্রুপের কাছে। নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতেই এ দুই গ্রুপে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলার সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান বলেন, চনপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শামীম ও রাব্বানী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।