বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য গুরুতর বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধানের মন্তব্যের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ওটাই। তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য গুরুতর। এর আগে, সোমবার নয়াদিল্লিতে এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্ভাগ্যজনক নিপীড়ন, হত্যা ও অন্যান্য নির্যাতন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের উদ্বেগের একটি প্রধান ক্ষেত্র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা মাত্র শুরু হচ্ছে, কিন্তু এটি উদ্বেগের মূল জায়গার একটি হয়ে রয়েছে।
তুলসী গ্যাবার্ডের এমন মন্তব্যের পর সোমবার রাতেই প্রতিবাদ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিবৃতিতে সরকার বলেছে, তুলসী গ্যাবার্ডের এ মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর। বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলামচর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ বা অভিযোগের ভিত্তিতে দেওয়া হয়নি। এটি গোটা দেশকে অন্যায়ভাবে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও চরমপন্থার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তবে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সামাজিক সংস্কার ও অন্যান্য সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে ইসলামি খেলাফতের ধারণার সঙ্গে ভিত্তিহীনভাবে যুক্ত করা দেশটির অসংখ্য নাগরিক ও বিশ্বব্যাপী তাদের বন্ধু ও অংশীদারদের কঠোর পরিশ্রমকে খাটো করে যারা শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে যে কোনো ধরনের ইসলামি খেলাফত ধারণার সঙ্গে দেশকে যুক্ত করার প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক নেতা ও জনপরিচিত ব্যক্তিত্বদের এ সংবেদনশীল বিষয়গুলো সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার আগে প্রকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কথা বলা উচিত। তাদের এমন কোনো মন্তব্য করা উচিত নয় যা ক্ষতিকর ধারণা শক্তিশালী করে, ভয় উসকে দেয় বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়।
উত্তর দিলেন না মার্কিন মুখপাত্র : বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার অভিযোগ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। গত সোমবারের ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের কাছে এ প্রশ্ন করা হয়। তবে এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেবেন না বলে জানান ট্যামি ব্রুস।
ব্রিফিংয়ে প্রশ্নকারী বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক দিন আগে প্রার্থী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে কথা বলেছিলেন, উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বের প্রায় ৬০ দিন হলো। বাংলাদেশে হিন্দুদের পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর মূল্যায়ন কী, তিনি কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
জবাবে ব্রুস বলেন, প্রশ্নকারী কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু দিক নিয়ে কথা বলছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার (ট্রাম্প) প্রশাসন অন্য দেশে যা ঘটছে, তা কীভাবে দেখে।
প্রশ্নকারী তখন বাংলাদেশের বিষয়ে জানতে চান।
ট্যামি ব্রুস বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও অবশ্যই এ বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রকৃতির ক্ষেত্রে তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেন। তবে যখন আবার আলোচনা, কূটনৈতিক বিবেচনা, এর সঙ্গে যুক্ত কথাবার্তা এবং কী ঘটতে পারে তার কথা আসে, তখন তিনি এখানে ফলাফল কী হবে, তা অনুমান করতে চান না। তার মনে হয়, সেটাই সবচেয়ে ভালো কাজ হবে।
প্রশ্নকারী বলেন, তিনি কি প্রশ্নটি নতুন করে করতে পারেন?
ব্রুস বলেন, না। কারণ, তিনি এ বিষয়ে উত্তর দেবেন না। সরকারের সঙ্গে সরকারের কূটনৈতিক বিবেচনা বা একটি নির্দিষ্ট দেশে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে মনোভাব ও পদ্ধতির উত্তর তিনি দেবেন না। যেগুলো একটি কূটনৈতিক ধরনের কথোপকথনের মধ্যে পড়ে, সেখানে স্পষ্টতই তিনি কথা বলতে পারেন না। অথবা কী ঘটতে পারে, সে সম্পর্কে তিনি অনুমান করতে পারেন না।