দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক বা নিম্নমুখী হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সি মুডিস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সম্পদের মানের অবনতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ঋণমান ‘বি-ওয়ান’ থেকে কমিয়ে ‘বি-টু’তে নামিয়েছে। এই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, স্থিতিশীল থেকে ‘নেতিবাচক’ অবস্থায় চলে গেছে অর্থনীতি।
বিশ্বখ্যাত ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিস এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সম্পদের ঝুঁকি বাড়ছে ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, যা ব্যাংকগুলোর মুনাফা ও স্থিতিশীলতার ওপর চাপ তৈরি করবে। সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী জুনে শেষ হওয়া চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে, যা আগের বছরের ৫ দশমিক ৮ শতাংশের তুলনায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ কম।
প্রতিবেদনে রেটিং কমার চার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো - ১. অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ২. ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি বাড়ছে। ৩. খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। ৪. মূল্যস্ফীতি চরমে পৌঁছেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, পোশাক খাতের সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা হ্রাস অর্থনৈতিক মন্দার অন্যতম কারণ। অপরদিকে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫ মাসের ব্যবধানে নীতিগত সুদের হার ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছে। তবে ২০২৫ সালেও মূল্যস্ফীতি উচ্চমাত্রায়, প্রায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশে থাকার আশঙ্কা করছে মুডিস।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমছে। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে, যা আগের বছরের ৫ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কম। ২০২৫ সালেও প্রায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হতে পারে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের হার ১৭ শতাংশ হয়ে গেছে, যা মাত্র ৯ মাস আগেও ৯ শতাংশ ছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন পরিস্থিতি নেতিবাচক (-২.৫%), যা বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় অনেক নিচে। সরকার নতুন করে টাকা না দিলে এসব ব্যাংকের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন হতে পারে। পণ্যের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। ব্যবসায় বিনিয়োগ কমতে পারে। চাকরি বাজারে প্রভাব পড়তে পারে।
মুডিস বলছে, বাংলাদেশের ব্যাংক খাত এখন কঠিন সময় পার করছে। সরকারের সহায়তা ছাড়া ব্যাংকগুলোর জন্য সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।