রাজনীতির মাঠে আত্মপ্রকাশের পর সপ্তাহজুড়ে আলোচনায় ছিল বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিশেষ করে নবগঠিত দলটি কবে নাগাদ নির্বাচন চায়, দলটির নেতাদের কাছ থেকে সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। জবাবে নির্দিষ্ট করে কোনো সময়ের কথা জানাননি দলটির নেতারা। তবে নির্বাচনি রোডম্যাপের আগে রাজনৈতিকভাবে মোটাদাগে তিনটি ইস্যুর সমাধান চেয়েছেন তাঁরা।
সংস্কারবিষয়ক জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং সংসদের আদলে গণপরিষদ নির্বাচন। মূলত এই তিন ইস্যুতে রাজনৈতিক সমাধান পাওয়ার পর যেকোনো সময় নির্বাচনের পক্ষে মত রয়েছে দলটির।
শুরুটা হয় গণপরিষদ নির্বাচন দিয়ে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে লিখিত ঘোষণাপত্রে গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র ঘোষণার দাবি জানান দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। পরে দলটির নেতারা বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন হতে হবে গণপরিষদ নির্বাচন। যেভাবে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেই একই কায়দায় হবে গণপরিষদ নির্বাচন। নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্যদের প্রথম কাজ হবে বর্তমান সংবিধান বাতিল ঘোষণা করে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন সংবিধান প্রণয়ন, সেটিকে বৈধতা প্রদান এবং দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র ঘোষণা। এই কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর মেয়াদের বাকি সময়টুকু গণপরিষদ সদস্যরা সংসদ সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন। গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত এনসিপির এই দাবি বাস্তবায়িত হবে কি না, সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে দলটি গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি আদায়ে ঈদের পর জোরালো কর্মসূচি হাতে নেওয়ার আভাস দিয়েছে। দলের যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন সভা-সেমিনার এবং ইফতার মাহফিলে দলের পক্ষ থেকে গণপরিষদ নির্বাচনের বাস্তবতা এবং যৌক্তিকতা সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরা হচ্ছে। ঈদের পর ব্যাপক আকারে গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে জনসংযোগ চালানো হবে। সব শ্রেণির মানুষের সামনে সংবিধান সংস্কারে গণপরিষদের গুরুত্ব এবং এ বিষয়ে এনসিপির অবস্থান তুলে ধরা হবে।’
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ন টাওয়ারে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং দলের সার্বিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। পুরো বক্তব্যে নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রণয়নের আগে তিনিও এই তিনটি ইস্যুর সমাধানকে সামনে রাখেন। ইস্যুগুলোর সমাধান সাপেক্ষে যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য এনসিপি মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান নাহিদ ইসলাম।
‘জুলাই সনদের’ বিষয়ে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ‘জুলাই সনদের’ কথা বলেছেন। সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই সনদ তৈরি করা হবে। যেখানে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রূপরেখা কেমন হবে, কী কী সংস্কার এই সময়ে করা হবে, কী কী সংস্কার ভবিষ্যতে করা হবে, কী কী সংস্কারের ধারাবাহিকতা থাকবে- রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে তার লিখিত অঙ্গীকার করবে।
এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের পরে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সংস্কার এবং ন্যায়বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির ওপর নির্ভর করছে নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে যাওয়ার আগে দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম ও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন দেখতে চাই আমরা।’