জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সহনশীলতা ও পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় থাকে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ৯০-এর দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জামায়াত স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রস্তাব দেয় ও এর পক্ষে জনমত তৈরি করে। গতকাল হোটেল ওয়েস্টিনে কূটনীতিকদের সঙ্গে ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতের আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিদেশি বন্ধুদের সম্মানে ইফতার আয়োজনের ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের এসব আয়োজন করতে দেয়নি। এমনকি কিছু অনুষ্ঠানের জন্য ভেন্যু বুকিং ও অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত সরকারের বাধার কারণে আমাদের সেইসব আয়োজন বাতিল করতে হয়েছে। আজ আমরা আবারও আপনাদের এই মর্যাদাপূর্ণ ইফতার মাহফিলে স্বাগত জানাচ্ছি এবং এজন্য মহান আল্লাহর দরবারে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে আমরা জুলাই বিপ্লবের সব শহীদ ও নির্যাতিতদের স্মরণ করছি, যাঁদের আত্মত্যাগের ফলে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো মুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরের দুঃশাসনে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে দমন করার সব ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে। জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, ছয় নেতাকে কারাগারে বা পুলিশের হেফাজতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন এবং অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন। এই নিষ্ঠুরতার মধ্যেও জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির জুলাই বিপ্লবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যেন আর কখনো পথ হারিয়ে না ফেলে, সে জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী এই সংস্কার উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করেছে। ইফতার মাহফিলে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
ইফতার পার্টিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার মিস সারাহ কুক, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মিসেস মেরি মাসদুপি, চীনের রাষ্ট্রদূত মি. ইয়ো ওয়েন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার গিরি গোরিওভিস কোজিন, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার মিস সুসান রেলি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মিকায়েল মিলার, ইরানের রাষ্ট্রদূত মি. মানসুর চাভোশি, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মি. রমিস সেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স জেমস এ স্টুয়ার্ট, পাকিস্তানের হাইকমিশনার কামরান ধাঙ্গল, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত, মরক্কো, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, ভারত, ভুটান, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, ইরাক, ভ্যাটিকান সিটি, কানাডা, ব্রাজিল, আলজেরিয়া, কসোভো, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি, আইআরআই এবং এনডিপির আবাসিক প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা শরীক হন। জামায়াতে ইসলামীর অন্য নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের ও মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন প্রমুখ।