পশ্চিম পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে টেকনিক্যাল শাখায় কর্মরত ছিলাম। ১৯৭১ সালের মার্চে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়ে দেশে ফিরে এসে যোগ দেই মুক্তিযুদ্ধে। চট্টগ্রামের মদুনাঘাট বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ও নগরীর বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় হামলাসহ বেশ কটি দুঃসাহসী অভিযানে সরাসরি অংশ নিই। সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নিই। এফএফ গ্রুপের ১৩৭ নম্বর গ্রুপ কমান্ডারের দায়িত্ব নিয়ে নেতৃত্ব দিই চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন অপারেশনে।
পশ্চিম পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় আমি ২৭ মার্চ বিবিসির সংবাদ শুনেছি। তাতে বলা হয়, তরুণ আর্মি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।
চট্টগ্রামে সমুদ্রের বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাহাজের বেতারযন্ত্রের সূত্র উল্লেখ করে বিবিসি তখন ওই সংবাদ পরিবেশন করেছিল। মনে মনে তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম দেশে ফিরে যাব। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেব। কিন্তু ব্যাপারটা খুব সহজ ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত বাঙালিদের সবসময় নজরদারিতে রাখা হতো। এর মধ্যেও ৮ জুন আমরা কয়েকজন করাচি থেকে ফ্লাইট যোগে দেশে ফিরতে সক্ষম হই।
পাকিস্তান থেকে এসে তিন দিন বাড়িতে ছিলাম। এরপর চলে যাই এক নম্বর সেক্টরের অধীন হরিণা ক্যাম্পে। সেখানে মেজর রফিক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সুলতান মাহমুদের সঙ্গে পরিচয় হয়। তারা আমাকে আগরতলা এয়ারফোর্সে পাঠিয়ে দেন। সেখানে কয়েকদিন ছিলাম। কিন্তু এয়ারফোর্সের কাজ পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় আমি ফিরে এসে গেরিলা দলে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলাম। পরবর্তীতে আমাকে চট্টগ্রাম শহরে বিশেষ কিছু দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। পাক হানাদারদের তৎপরতা থামাতে জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধের পরিকল্পনা করা হলো। এর অংশ হিসেবে পতেঙ্গা ইস্টার্ন রিফাইনারি উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আশপাশের বাসিন্দাদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে- এমনটি চিন্তা করে বাদ দেওয়া হয় সেই পরিকল্পনা। সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আমরা প্রায় ৩০ জনের একদল যোদ্ধা মদুনাঘাট বিদ্যুৎ সাবস্টেশনে আক্রমণ চালাই। এতে কেন্দ্রটি ধ্বংস হয়। মান্নান নামে আমাদের এক যোদ্ধা ওই অপারেশনে শহীদ হন। নভেম্বরের শেষদিকে আমরা চট্টগ্রাম শহরের সবগুলো বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারে একযোগে হামলা চালিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অচল করে দিই।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, শ্রুতিলিখন : মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম।